প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বার ২০২৪ , ০৩:৪৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
নিউইয়র্কে যথাযোগ্য মর্যাদায় মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে ১৭ নভেম্বর রোববার সন্ধ্যায়। বাংলাদেশের মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ফাউন্ডেশন, নিউইয়র্ক এর আয়োজনে জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে এ উপল¶্যে আলোচনা সভায় অংশ নিয়েছেন প্রবাসীরা। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি আলী ইমাম শিকদার এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দিন নাসের।
অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, মজলুম জননেতা মওলানার জীবন নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয় এবং ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ওপর বিশ্লেষণমূলক আলোচনায় অংশ নিয়েছেন কানাডার মন্ট্রিয়েল থেকে আগত ভাসানী গবেষক ড.আবিদ বাহার এবং কলকাতা থেকে আগত ভাসানী চর্চাকেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসিফ আক্রাম।
আলোচনা সভায় বক্তারা দেশ ও প্রবাসে ভাসানীকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, মওলানা বাংলাদেশের রাজনীতিকদের আইকনিক নেতা, নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। তাঁর মতো নেতা ভারত উপমাহাদেশে বিরল। তিনিই একমাত্র নেতা যিনি ¶মতার শীর্ষে থাকার রাজনীতি না করে মেহনতি মানুষের পাশে থেকে রাজনীতি করেছেন। কুঁড়ে ঘরে থেকে রাজনীতি করেছেন। তিনি সকল ধর্মের উর্দ্বে উঠে সর্বাগ্রে মানবতা আর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করেছেন। তাঁকে নিয়ে দেশ ও প্রবাসে বেশী বেশী গবেষণা হওয়া দরকার। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁকে যথাযথ সম্মান জানাতে হবে। এজন্য সবাইকে কাজও করতে হবে। অধিকারবঞ্চিত,অবহেলিত ও মেহনতি মানুষের অধিকার ও স্বার্থর¶ায় আজীবন নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম করে গেছেন মওলানা ভাসানী। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি দেশ ও জনগণের পক্ষে নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন। কিন্তু তাঁকে কখনো যোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয়নি। বক্তারা দেশের চলমান পরিস্থিতিতে মওলানা ভাসানীর মতো নেতার বড় প্রয়োজন উল্লেখ করে বলেন, দেশে ‘খামোশ’ বলার মতো নেতার দরকার।
ড. আবিদ বাহার বলেন, মওলানা ভাসানীকে বুঝতে হলে তাঁকে জানতে হবে, চিনতে হবে। আর এজন্য মওলানাকে নিয়ে দেশ ও প্রবাসে বেশী বেশী গবেষণা প্রয়োজন। পাশাপাশি মওলানাকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। সবাই মিলেই এই কাজ করতে হবে।তিনি আরো বলেন, আমাদের সবার খেয়াল রাখতে হবে আগামীতে যাতে আর কোন ডাকাত বাংলাদেশের রাষ্ট্র ¶মতায় আসতে না পারে।
ড. আসিফ আক্রাম বলেন, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী শেষ জীবনে রুবিয়াত’র উপর নির্ভর ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন এই রুবিয়াতের উপরই রাষ্ট্র বা সমাজ পরিচালিত হোক। কিন্তু সেই সময় অনেকেই মনে করেছিলেন এটা মৌলবাদী। এটা তাদের বোঝার ভুল। মাওলানা ভাসানী সবার সমান অধিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন।
আলোচনায় আরো অংশ নেন ড. মাহফুজ চৌধুরী,সাঈদ তারেক, মোহাম্মদ হোসেন খান, লুৎফর রহমান হেলাল, সাংবাদিক মাহমুদ খান তাসের, আবু তালেব চৌধুরী চান্দু, মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ,দেশ সম্পাদক মিজানুর রহমান,সাপ্তাহিক আজকালের বিশেষ প্রতিনিধি মনোয়ারুল ইসলাম,সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন, কাজী ফৌজিয়া, শামসুন্নাহার নীরা, সৈয়দা মাহমুদা শিরিন, শাহ আলম দুলাল, কিউ জামান, এবিএম ওসমান গণি, আনোয়ার হোসেন লিটন, মোস্তফা করিম ফরিদ, দেলোয়ার হোসেন শিপন, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ফরহাদ হোসেন, ডা. নার্গিস রহমান, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট আমিন খান জাকির, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক, মফিজুল ইসলাম ভূইয়া রুমি, জাহাঙ্গীর সরওয়ার্দী, ফারুক হোসেন মজুমদার, জাবেদ উদ্দিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিউইয়র্কের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের প্রমুখ।
বক্তারা ¶োভের সাথে বলেন,মওলানা ভাসানী যোগ্য মর্যাদা আজো পাননি। বাংলাদেশে সরকারীভাবে ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী কেন পালন করা হয়নি। প্রধান উপদেষ্টা কেন মাওলানা ভাসানীর কথা বলেননি। নিশ্চয় তিনি সাম্রাজ্যবাদের ভয়ে বলেননি। অনুষ্ঠানে বক্তারা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে ইতিহাসে সঠিক জায়গা এবং মূল্যায়নের আহবান জানান।
আলোচকরা বলেছেন,মওলানা ভাসানী আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম। সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামের প্রবাদ পুরুষ ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী। মওলানা ভাসানীকে বাংলাদেশের ‘ফাউন্ডার ফাদার’ হিসেবে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে মওলানা ভাসানীর অবদান জাতির কাছে চিরদিন অবিস্মরণীয় করে রাখার জন্য পাঠ্যবইতে সঠিক ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। পাশাপাশি সভা-সমাবেশের মাধ্যমে সর্বস্তরে ভাসানীকে তুলে ধরতে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের প্রতি দাবী জানানো হয় সভায়।
বক্তারা আরও উল্লেখ করেন, অসহায় মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং স্বাধীনতা,সার্বভৌমত্ব সুর¶ায় মওলানা ভাসানী সবসময় আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। তার অগাধ দেশপ্রেম, দেশ ও জাতির স্বার্থ র¶া এবং গণতন্ত্র ও মানবতার শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে যুগ যুগ ধরে আমাদের অনুপ্রাণিত করবে।