এখন সময় ডেস্ক :

প্রকাশিত: ২৬ মার্চ ২০২৫ , ০৭:১৯ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

এক সপ্তাহে গাজায় ইসরাইলী নৃশংসতায় ২৭০ ফিলিস্তিনী শিশু নিহত

ইসরাইলী হামলা গাজায় এক সপ্তাহে অন্তত ২৭০ শিশুর প্রাণ গেছে। যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় নতুন করে সম্প্রতি গাজায় হামলা শুরু করেছে তেল আবিব। আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন শিশু মৃত্যুর এই তথ্য জানিয়েছে। টানা অষ্টম দিনের মতো গাজায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলী বাহিনী। মঙ্গলবার ভোরেও রকেট হামলায় গাজায় সাত শিশুসহ কমপক্ষে ২৩ জন নিহত হয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেন বলেছে, গত ১৮ মার্চ পুনরায় হামলা শুরুর পর থেকে ২৭০ জনের বেশি শিশু নিহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে উপত্যকাজুড়ে ইসরাইলের যুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত ৫০ হাজার ১৪৪ ফিলিস্তিনী নিহত এবং ১ লাখ ১৩ হাজার ৭০৪ জন আহত হয়েছেন। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস মৃতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০-এরও বেশি বলে দাবি করেছে। প্রেস টিভি, রয়টার্স , আনাদোলু, আল জাজিরা।

ফিলিস্তিনীদের এবার জাবালিয়া ছাড়তে ‘চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি’ এবার গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া এলাকা থেকে ফিলিস্তিনীদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করছে দখলদার ইসরাইলী বাহিনী। এলাকাটি দ্রুত খালি না করলে হামলা করা হবে বলেও ‘চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি’ দিয়েছে দখলদার বাহিনী। বলা হয়েছে, ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র আভিখাই আদরায়ে সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, জাবালিয়া এলাকায় বসবাসকারী গাজার সব নাগরিকের জন্য এটি হামলার আগের চূড়ান্ত সতর্কবার্তা। তিনি ফিলিস্তিনীদের দক্ষিণের ‘পরিচিত আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে’ চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আভিখাই আদরায়ে এর আগেও উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া ও বেইত হানুনের বাসিন্দাদের জন্য একই ধরনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও গাজা উপত্যকাকে খালি করে ফিলিস্তিনীদের মিসর, জর্ডান ও অন্যান্য দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার একটা পরিকল্পনা তুলে ধরেন। যা মুসলিম, আরব বিশ্বসহ বিশ্বনেতাদের তোপের মুখে পড়ে। এরই মধ্যে ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। সোমবার এক এক্স পোস্টে তিনি এই আহ্বান জানান। গাজার যুদ্ধবিরতি পুনরুদ্ধারে একটি নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করেছে মিসর। মিসরের নতুন পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, হামাস প্রতি সপ্তাহে পাঁচজন ইসরাইলী বন্দীকে মুক্তি দেবে এবং প্রথম সপ্তাহের পর ইসরাইল যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ কার্যকর করবে- দুটি নিরাপত্তা সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

গাজায় ইসরাইলী হামলায় নারী-শিশুসহ নিহত ৩৭, ইয়েমেনে মার্কিন হামলা : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখ-ে ইসরাইলী হামলায় আরও ৩৭ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অনেকেই নারী ও শিশু। এছাড়া সিরিয়াতেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ওই হামলায় দেশটিতে প্রাণ গেছে ৬ জনের। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত আরেক দেশ ইয়েমেনেও মার্কিন বাহিনীর হামলা অব্যাহত রয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মঙ্গলবার গাজায় ইসরাইলী বাহিনী কমপক্ষে ৩৭ জন ফিলিস্তিনীকে হত্যা করেছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অনেক শিশু এবং নারীও রয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজার বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধে কমপক্ষে ৫০ হাজার ১৪৪ জন ফিলিস্তিনী নিহত এবং আরও ১ লাখ ১৩ হাজার ৭০৪ জন আহত হয়েছেন। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস ইসরাইলী আগ্রাসনে ফিলিস্তিনীদের প্রাণহানির সংখ্যা আপডেট করে ৬১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি উল্লেখ করে জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার ফিলিস্তিনীকে মৃত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। এদিকে গাজায় আল জাজিরার সংবাদদাতা জানিয়েছেন, গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত আল-বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের একটি আবাসিক অ্যাপার্টমেন্টে ইসরাইলী বিমান হামলায় এক শিশু নিহত এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। শিশুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বলেছে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলী বাহিনী পুনরায় যুদ্ধ শুরু করার পর এক সপ্তাহে ২৭০ জনের বেশি শিশু নিহত হয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গত কয়েক দিন শিশুদের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। সংস্থাটির গাজায় শিশুবিষয়ক পরিচালক র‌্যাচেল কামিংস বলেছেন, “বোমা পড়ছে, হাসপাতালগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, শিশুদের হত্যা করছে এবং বিশ্ব নীরব। কোনও সহায়তা নেই, কোনও নিরাপত্তা নেই, ভবিষ্যৎ নেই।”

এছাড়া সিরিয়ায় ইসরাইলের বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। দেশটির ডেরায় চালানো এই হামলায় কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে কাতার ও সৌদি আরব। অন্যদিকে ইয়েমেনে মার্কিন সামরিক বাহিনী বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। লোহিত সাগরের জাহাজ চলাচলে হুথিদের পুনরায় আক্রমণের হুমকির প্রেক্ষিতে মার্কিন বাহিনী ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলীয় সাদা প্রদেশে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। হুথি-সংশ্লিষ্ট আল মাসিরাহ টিভি জানিয়েছে, মার্কিন বাহিনী উত্তরাঞ্চলীয় সাদা প্রদেশের সাহার জেলায় দুটি অভিযান চালিয়েছে। চ্যানেলটি একই জেলায় তিনটি হামলার খবর প্রকাশ করার কয়েক ঘণ্টা পরে সর্বশেষ অভিযানগুলো শুরু হয়। গত ১৫ মার্চ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দরিদ্র এই দেশটিতে প্রতিদিন আক্রমণ চালিয়ে আসছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। লাতাগার এই হামলায় কমপক্ষে ৫৩ জন নিহত এবং আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন। গাজা উপত্যকায় সম্পূর্ণ অবরোধের কারণে হুথিরা লোহিত সাগরে ইসরাইলের সঙ্গে সংযুক্ত জাহাজগুলোতে পুনরায় আক্রমণ শুরু করার হুমকি দেওয়ার পরে এই অভিযান শুরু হয়েছিল।

ফিলিস্তিনী শিশুদের মৃত্যুদ-ের পরামর্শ ইসরাইলী রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যে নিন্দার ঝড় : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখ-ে ‘বন্দুক’ বা ‘গ্রেনেড’ হাত দিয়ে ধরার জন্য ফিলিস্তিনী শিশুদের মৃত্যুদ- কার্যকরের পরামর্শ দিয়েছেন অস্ট্রিয়ায় নিযুক্ত ইসরাইলী রাষ্ট্রদূত ডেভিড রোয়েট। ইউরোপের দেশটির ইনসব্রুকে ইহুদি সম্প্রদায়ের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি এই বিতর্কিত প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তবে তিনি গাজার শিশুদের অস্ত্র বহন করার কোনও প্রমাণ দিতে পারেননি। বৈঠকে গোপনে রেকর্ড করা ভিডিও ফাঁস হওয়ায় এই তথ্য জানা যায়। দখলদার ইসরাইলের এই রাষ্ট্রদূতের এমন মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিও নিয়ে অনেকেই নিন্দা জানিয়েছেন।

গত ২৩ মার্চ এক প্রতিবেদনে প্যালেস্টাইন ক্রোনিকলস জানিয়েছে, গত ১৮ মার্চ ভোরে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলী দখলদার বাহিনীর যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের দুদিন পর ভিডিওটি রেকর্ড করা হয়। ইসরাইলী রাষ্ট্রদূত বেসামরিক হতাহতের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ উড়িয়ে দিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেছেন, ‘আপনি বিশ্বাস করছেন যে ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে শিশুদের লক্ষ্যবস্তু করছে, যা সঠিক নয়।’ জাতিসংঘের শিশু-বিষয়ক তহবিল (ইউনিসেফ)- এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলী দখলদার বাহিনী গাজায় সাড়ে ১৪ হাজারেরও বেশি শিশুকে হত্যা করেছে। তবে বর্তমানে ইসরাইলের হাতে নিহত শিশুর সংখ্যা বেড়ে ১৫ হাজার ৬১৩ জনে দাঁড়িয়েছে।

গাজায় বিক্ষোভ ফিলিস্তিনীদের : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখ-ে ইসরাইলী হামলা অব্যাহত রয়েছে। নিরলস এই হামলায় প্রতিদিনই ঘটছে বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা। এমন অবস্থায় ভূখ-টিতে বিক্ষোভ করেছেন শত শত ফিলিস্তিনী। গাজার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার দাবিতে এই বিক্ষোভ করেছেন তারা। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় হামাস-বিরোধী বৃহত্তম বিক্ষোভে শত শত মানুষ অংশ নিয়েছেন। তারা স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীর ভূখ-ের শাসন ক্ষমতা থেকে সরে আসার দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। তবে মুখোশধারী হামাস যোদ্ধারা যাদের মধ্যে কেউ কেউ বন্দুক এবং কেউ কেউ লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভকারীদের থামানোর চেষ্টা করেন এবং জোরপূর্বক ছত্রভঙ্গ করে দেন। বিক্ষোভকারীদের হামাসবিরোধী স্লোগানও দিতে শোনা যায় বলে বিবিসি জানায়।