প্রকাশিত: ২৬ মার্চ ২০২৫ , ০৮:০২ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশের জন্য ঐক্যের দরকার

বর্তমানে বাংলাদেশে নানা ধরনের অস্থিরতা চলছে। নানা আশংকা ও গুজব মানুষকে পুনরায় বিভ্রান্ত করছে। বিশেষ করে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ফিরে আসা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা শুরু হওয়ার পর জনমনে শংকা বেড়েছে। নানা মহলের ভূমিকা নিয়েও নতুন করে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশের জন্য সহায়ক নয়। একটি অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে সহায়ক ও দায়িত্বশীল কাঠামো ও কার্যক্রম অব্যহত রাখা প্রয়োজন ছিল, তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে বাংলাদেশ ফের ঝুঁকির মুখে পড়ে যেতে পারে।

একটি বিষয় আমরা জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান পরবর্তী সময় থেকেই দেখছি আর তাহলো আওয়ামী লীগের সংকীর্ণ ও দেশবিরোধী ভূমিকা। তারা যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় ফিরতে চায়। এ টার্গেটকে সামনে রেখে দলটির নেতাকর্মীর বড়ো একটি অংশ ভারতে সমবেত হয়েছে। শেখ হাসিনা নিয়মিতভাবে তার দলের নেতাকর্মীদের সাথে অনলাইনে বৈঠক করছেন। শেখ হাসিনার ভারতের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের খবরও চাওর হয়েছে। প্রথম কয়েক মাসে শেখ হাসিনার বেশ কিছু ফোনালাপ রেকর্ড ফাঁস হলেও এখন আর তা হচ্ছে না। তার মানে এ নয় যে, তিনি এবং তার দল নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে আছেন। বরং আগের চেয়েও বেশি সক্রিয় হয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের ইন্ধনেই প্রতিবেশি দেশের মিডিয়ায় বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার চালানো হয়েছে এবং হচ্ছে। বাংলাদেশে চরমপন্থীদের উত্থান ঘটছে এরকম একটি প্রচারণা চালিয়ে আগের মতো করে জঙ্গী কার্ড খেলার ক্ষেত্র প্রস্তত করা হয়েছে। ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মাদ ইউনুসের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন অপপ্রচার চালানো হয়েছে। তার ব্যক্তি চরিত্র হনন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও ভারতের যৌথ প্রচারণার ফাঁদে পড়ে ভারত সফরে আসা বিদেশি অতিথিরা পর্যন্ত বাংলাদেশ এবং এর অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন।

দেশের অভ্যন্তরেও বিভিন্ন ধরনের স্যাবোটাজ করা হয়েছে। দাবির পর দাবি নিয়ে রাজপথগুলো দখলে রেখেছে বিভিন্ন পেশার বিভিন্ন সংগঠন। ‘দেশ ভালো চলছে না কিংবা আগেই ভালো ছিলাম’- এরকম প্রতিপাদ্য নিয়ে গণমানুষকে বিভ্রান্ত করার খেলায় নেমেছে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিকভাবে এখনো আওয়ামী লীগ মাঠে দৃশ্যমান না হলেও আওয়ামী সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সেক্টর মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং নিকট ভবিষ্যতে পূর্ণ শক্তি নিয়ে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এরকম একটি পরিস্থিতি সম্ভব হয়েছে আমাদের জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরার কারণে। এ কথা স্পষ্টতই দৃশ্যমান যে, ৫ আগস্টের প্রাক্কালে সকল দল ও নানা মতের নানা পথের লোকেরা যেভাবে ঐকবদ্ধ হয়েছিলেন তা অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আর ধরে রাখা যায় নি। এ ঐক্য আগের মতো দৃঢ় ও অবিচল যে থাকবে না, তা প্রত্যাশিত ছিল কিন্তু এরপরও দেশের স্বার্থে ও আওয়ামী লীগ মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে যে ঐকমত্যের প্রয়োজন ছিল, আমরা তা দেখতে পাইনি। রাজনৈতিক স্বার্থ, ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি ও আর্থিক সুযোগ সুবিধা পাওয়ার লোভ আমাদের চিরচেনা জাতীয় ঐক্যকে নড়বড়ে করে দিয়েছে। আর পতিত আওয়ামী লীগসহ দেশি বিদেশি নানা অপশক্তি সেই সুযোগটাই নিচ্ছে।

আমরা মনে করি, বাংলাদেশ এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ সময় এখনো পার হয়ে যায়নি; বরং সামনে আরো বড়ো ধরনের কিছু চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। সেগুলো মোকাবেলা করা আমাদের জন্য খুব বেশি কঠিন হবে না যদি আমরা একতাবদ্ধ থাকতে পারি। রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সম্প্রদায়গুলোর কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা যে তারা সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন এবং অন্য সব কিছুর ওপরে দেশ ও জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবেন। এমন কোনো আচরণ করবেন না বা সিদ্ধান্ত নেবেন না যাতে করে ফ্যাসিবাদী অপশক্তির প্রত্যাবর্তনের সুযোগ তৈরি হয়।