প্রকাশিত: ২৩ মে ২০২৫ , ০৪:০৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
(স্বাধীনতার সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ: অস্থিরতা, আশাবাদ ও ‘৩৬ জুলাই’-এর প্রত্যয়। অন্তবর্তী সরকারের প্রেক্ষাপটে পরাজিত গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র, ছাত্রসমাজের জাগরণ এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ।)
বাংলাদেশ আজ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে উপনীত হয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে চলমান দমন-নিপীড়ন ও স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে জনগণের আন্দোলন ও ছাত্রজনতার রক্ত-অবদানের মাধ্যমে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই সরকারকে জনগণ একটি আশার বাতিঘর হিসেবে গ্রহণ করেছে। কিন্তু জাতির এই উত্তরণকে থামিয়ে দিতে এখনো সক্রিয় পরাজিত, পলাতক, ও ষড়যন্ত্রী শক্তিগুলো, যারা দেশের মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও বহিঃশক্তির মদদে অশান্তির বীজ বপন করতে তৎপর।
পরাজিত শক্তির পুনরায় উত্থানের ষড়যন্ত্র করছে।দেশের বর্তমান শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র স্পষ্ট। যারা অতীতে জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে এবং দুর্নীতিকে প্রতিষ্ঠা করেছে, তারা আবারো রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অঙ্গনে ফেরার পথ খুঁজছে। আন্তর্জাতিক কিছু গোষ্ঠীও এই ষড়যন্ত্রে সহযোগিতা করছে- কারণ একটি স্বাধীনচেতা বাংলাদেশ তাদের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থে হুমকি।
এই প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক সচেতনতা ও জাতীয় ঐক্য অতি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। দেশকে যদি পুনরায় স্বৈরাচার বা আধিপত্যবাদী শক্তির করালগ্রাস থেকে রক্ষা করতে হয়, তবে জনগণকে আবারো জেগে উঠতে হবে।
এই প্রেক্ষাপটে ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি এসেছে, তা শুধু একটি রাজনৈতিক অবস্থান নয়, বরং একটি নৈতিক ও আদর্শিক আহ্বান। তারা বলেছে:
“কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর শিশুসুলভ অপরিপক্ব আচরণের কারণে জুলাই হারিয়ে যেতে পারে না… আমরা ফ্যাসিবাদ প্রশ্নে এক ও অভিন্ন।”
এখানে ‘৩৬ জুলাই’ একটি আন্দোলনের স্পিরিট, একটি ঐক্যের প্রতীক, শহীদদের রক্তের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রকাশ। এটি সেই শক্তির নাম, যা ইতিহাসের প্রতিকূল মুহূর্তে পরিবর্তনের সূচনা করে। তারা স্পষ্ট করেছে- রাজনীতি মানে ক্ষমতার লড়াই নয়, রাজনীতি মানে ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান।
ইতিহাস ও প্রকৃতির নিয়মে অত্যাচারের নির্মম পরিণতি অনস্বীকার্য। প্রকৃতি কখনো বাড়াবাড়ি সহ্য করে না। যারা ইতিহাসকে উপেক্ষা করে স্বৈরাচারের পথে হাঁটে, তাদের পরিণতি হয় নির্মম। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন বহু উদাহরণ রয়েছে যেখানে জনগণের প্রতিরোধ, ছাত্র আন্দোলনের জাগরণ, কিংবা প্রকৃতির নিয়ম- সব মিলেই এক একটি শাসকের পতন এনেছে।
এমতাবস্থায় আল্লাহর উপর আস্থা এবং ভবিষ্যতের দিগন্ত উন্মোচিত হবেই- এই প্রত্যাশা। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে, মহান আল্লাহর সহায়তা ছাড়া কোনো স্থায়ী পরিবর্তন সম্ভব নয়। কিন্তু সেই সহায়তা তখনই আসে, যখন একটি জাতি নিজে জেগে উঠে। আজ সেই জাগরণের সময়। আজ ইতিহাস আবার ডাক দিচ্ছে সাহসী, আত্মদায়ী ও সৎচিন্তার মানুষদের।
এই সন্ধিক্ষণে প্রয়োজন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতৃত্ব, জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন এবং ঐক্যবদ্ধ জনগণ। যারা ষড়যন্ত্র করছে, তাদের পরাজিত করতে হবে যুক্তি, আদর্শ ও বাস্তব কাজের মাধ্যমে। ‘৩৬ জুলাই’ শুধু একটি ছাত্র সংগঠনের বিবৃতি নয়- এটি ভবিষ্যতের পথে একটি আলোকবর্তিকা। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রামে এটি এক অপরিহার্য ঘোষণা।
এই সংগ্রাম কেবল রাজনৈতিক নয়- এটি নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণও বটে। অতএব, আমাদের প্রত্যয়ের ভিত্তি হতে হবে ঈমান, আমাদের পথচলার অনুপ্রেরণা হতে হবে শহীদের রক্ত এবং আমাদের প্রত্যাশার দিগন্ত হতে হবে একটি ন্যায়ভিত্তিক, মুক্ত বাংলাদেশ।
“অবশ্যই আল্লাহ তাদের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে না।”
(আল-কুরআন সূরা আর-রা’দ, আয়াত ১১)
এ আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয়- আল্লাহ ততক্ষণ সাহায্য করেন না, যতক্ষণ আমরা নিজেরা পরিবর্তনের জন্য এগিয়ে না আসি। এই সময় আমাদের সেই এগিয়ে যাওয়ার সময়।
এই প্রসঙ্গে আমার শেষ উক্তি-
“রক্ত দিয়ে লেখা সে পৃষ্ঠা, কালি দিয়ে মুছিয়ে দিও না।
শহীদের চোখে যে স্বপ্ন ছিল, ভীরু গলায় ভুলে যেও না।
যে মাটিতে তারা লুটিয়ে পড়েছিল, সেই মাটির নাম বাংলাদেশ—
তাকে ফাঁসিতে ঝোলাতে দেব না আর কোনো দুরাচার!”
লেখক: কাজী শামসুল হক