গাজীউল হাসান খান

প্রকাশিত: ০৩ জুলাই ২০২৪ , ০৪:১২ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

ব্রিটেনের আসন্ন নির্বাচন ও লেবার পার্টির ভবিষ্যৎ

গাজীউল হাসান খান

বিশ্বব্যাপী সংসদীয় গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত ব্রিটেনের ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্টের নির্বাচন হতে যাচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই। নির্বাচনটি বহু কারণে আধুনিক ব্রিটেনের নির্বাচনের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত আলোচিত বিষয়বস্তু হয়ে থাকবে বলে অনেকের ধারণা। এর অন্যতম কারণ ব্রিটেন বা যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগত রাজনৈতিক পরিবর্তন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর উপনিবেশবাদী যুক্তরাজ্য ক্রমে বিশ্বব্যাপী রাজত্ব হারিয়ে আদর্শগত দিক থেকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের পথ ধরে তার মূল্যবোধগত ভাবমূর্তিটি ধরে রাখতে চেষ্টা করেছিল।

কিন্তু পর্যায়ক্রমে অর্থনৈতিক চাপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোটের প্রভাবে যুক্তরাজ্য তার মূল্যবোধগত বৈশিষ্ট্য নিয়েও চরম সংকটের মুখে পড়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষা কিংবা পরাশক্তিগত আধিপত্যের কাছে যুক্তরাজ্য ক্রমে তার নীতি-নৈতিকতা ও ভাবমূর্তি হারাতে থাকে।

কোরিয়া যুদ্ধ নামে পরিচিত পঞ্চাশের দশকের ‘ঠাণ্ডা লড়াই’ কিংবা বিংশ শতকের শেষ দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলেও যুক্তরাজ্য অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব-প্রতিপত্তি থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়নি। বরং দিনে দিনে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের লেজুড়বৃত্তিতে আরো অনেক গভীরে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়ে।

এতে তার শক্তিশালী ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ইউরোপ গড়ে তোলার ধ্যান-ধারণা সম্পূর্ণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। তবে তার শেষ বিপর্যয়টি সংঘটিত হয়েছে রক্ষণশীল দলের নেতা বরিস জনসনের নেতৃত্বে ‘ব্রেক্সিটের’ মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগের মধ্য দিয়ে। তার পর থেকে যুক্তরাজ্য বা ব্রিটেন চূড়ান্তভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছে। এবং এর চূড়ান্ত প্রতিফলন ঘটেছে গাজায় ইহুদিবাদী ইসরায়েলের গণহত্যায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দ্বিমুখী নীতি বা দ্বিচারিতায় ব্রিটেনের সমর্থন জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে।

ব্রিটেন গাজায় চরম ধ্বংসযজ্ঞ কিংবা হত্যাকাণ্ডের সময় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সমর্থন দেয়নি। বরং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অন্যতম প্রধান প্রতিভূ ইসরায়েলকে নির্দ্বিধায় অস্ত্রশস্ত্রসহ অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে গেছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এই নির্লজ্জ মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ডে ব্রিটিশ ক্ষমতাসীন দলের পাশাপাশি অনেকটা বাম ধারার প্রগতিশীল লেবার পার্টি বা শ্রমিক দলের নেতারাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন দিয়ে গেছেন। শক্তিশালী করেছেন ইহুদিবাদী নেতানিয়াহুর পৈশাচিক সামরিক আগ্রাসনকে।

ব্রিটেনের আসন্ন নির্বাচন ও লেবার পার্টির ভবিষ্যৎউপরোল্লিখিত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এখন সামনে চলে এসেছে ব্রিটিশ সংসদীয় নির্বাচন।

এতে রক্ষণশীল দলের উপর্যুপরি ব্যর্থতার কারণে বিকল্প দল হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে লেবার পার্টি। নতুবা লেবার পার্টিতে নীতি কিংবা কর্মসূচিগত দিক থেকে এমন কোনো কিছু ঘটেনি, যাতে এই দলটি বাহবা কুড়াতে পারে। লেবার পার্টির মতো একটি প্রগতিশীল ধারার রাজনৈতিক দলে এখন যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা রক্ষণশীল দলের নেতাদের চেয়ে আরো অনেক প্রতিক্রিয়াশীল বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তাই রক্ষণশীলরা যেমন তাঁদের একটানা ১৪ বছরের শাসনকালে তাঁদের অবস্থানকে কাজে লাগাতে পারেননি, তেমনি লেবার পার্টির নেতারাও দলীয় নীতি-নৈতিকতা হারানোর কারণে তাঁদের কর্মসূচি কতটুকু বাস্তবায়িত করতে পারবেন সেটা নিয়ে দলের ভেতরে তুমুল বিতর্ক রয়েছে। অনেক রাজনৈতিক সংবাদ বিশ্লেষকের মতে, লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার অনেক ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াশীল রক্ষণশীল নেতাদের চেয়েও অনেক বেশি দক্ষিণপন্থী, যা দলের নেতাকর্মী কিংবা সমর্থকরা বেশিদিন সহ্য করবে না। দেখা যাবে দু-এক বছরের মাথায়ই ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির নেতাকর্মী কিংবা সমর্থকরা রাজনৈতিকভাবে বেঁকে বসেছে।

অনেকেই প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করছে নেতাদের বিরুদ্ধে। কারণ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের তাঁবেদারি কিংবা ইউক্রেন ও গাজার মর্মান্তিক ঘটনাকে সাধারণ মানুষ বেমালুম ভুলে যেতে পারে না। এর প্রতিক্রিয়া থেকে যাবেই। তা ছাড়া জ্বালানি, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান, গণযোগাযোগ, নিত্যনতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা কিংবা সর্বোপরি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিবর্তিত অবস্থায় ক্ষমতায় এসেও রাতারাতি বিশেষ কিছুই করতে পারবেন না শ্রমিক দলীয় নেতারা। তবে বর্তমান নির্বাচনী জোয়ারকে যে ঠেকানো যাবে না, তা তো অনস্বীকার্য। এ ক্ষেত্রে সার্বিক দিক থেকে বোধোদয় হতে কিছু সময় তো লাগবেই। ব্রিটেনের বর্তমান বাজারব্যবস্থা এবং দ্রব্যমূল্যগত পরিস্থিতি যদি লেবার দলীয় নেতাদের দ্রুত সজাগ করে তুলতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সার্বিক দৃশ্যপট বদলাবে অতি অল্প সময়ের মধ্যে। এর পাশাপাশি রয়েছে পররাষ্ট্রনীতি, বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী বা আধিপত্যবাদী নীতির কাছে লেবার পার্টির নেতাদের আত্মসমর্পণ কিংবা বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে অধিক হারে ঋণ গ্রহণ কার্যক্রম ব্রিটেনকে খুব সহজেই অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া করে তুলতে পারে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই থাকবে না।

বর্তমানে ব্রিটেনের রাজনৈতিক অঙ্গনে শ্রমিক দলের ‘জয়ের কবলে ক্ষয় নেই’-এর মতো একটি অবস্থা চলছে। এতে অনেক ভাষ্যকার এরই মধ্যে বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনে শ্রমিক দল সম্ভবত ৬৫০টি আসনের মধ্যে ৪০৫ থেকে ৪২৫টি লাভ করতে পারে, যা হতে পারে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। সে বিচিত্র ঘটনায় আরো বৈচিত্র্য যোগ করতে পারে রক্ষণশীল দলীয় প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের আসন হারানোর বিষয়টি। এ ধরনের বিপর্যকর ঘটনার পাশাপাশি আরো বলা হচ্ছে যে নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বাধীন রিফর্ম পার্টি রক্ষণশীলদের অনেক আসন দখল করে নিতে পারে। সে সম্ভাবনাকে কোনোমতেই নাকচ করা যাচ্ছে না। কারণ সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাদের জনসমর্থন প্রায় ২০ শতাংশে পৌঁছেছে। অন্যদিকে ১৮৫৯ সালে গঠিত লিবারেল পার্টির সঙ্গে যোগ দিয়ে ১৯৮৮ সালে গঠন করা হয়েছিল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। তারা ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত রক্ষণশীল দলের সঙ্গে জোট গঠন করে ক্ষমতায় ছিল পাঁচ বছর। বর্তমানে নির্বাচনের বাজারে তাদের জনপ্রিয়তাও ১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলে জানা গেছে। তা ছাড়া রয়েছে গ্রিন পার্টি। তাদের শতকরা সাত ভাগ জনসমর্থন এবং সংসদে একটি আসন ছিল। আসন্ন নির্বাচনে আগের তুলনায় তারা আরো কিছুটা ভালো করবে বলে অনেকের ধারণা।

এমন একটি অবস্থায় শেষ পর্যন্ত লেবার পার্টি ৩৬ শতাংশের ওপর জনসমর্থন পেতে পারে বলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে। প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে লেবার পার্টি এখন তুঙ্গে রয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে ইলেকট্রনিক মিডিয়াও যথেষ্ট সরব। লেবার পার্টির নির্বাচনী ঘোষণাপত্র অনুযায়ী তাদের নতুন শিল্প কৌশল প্রবর্তন, দৈনিক ৪০ হাজার মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি, প্রয়োজন অনুপাতে নতুন ডাক্তার, নার্স ও শিক্ষক নিয়োগ এবং তাঁদের বেতন বৃদ্ধির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া ব্রেক্সিট-পরবর্তী ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন লেবার দলীয় নেতা স্যার কিয়ার স্টারমার। কিন্তু সংকট দেখা দিয়েছে লেবার পার্টির আয় বৃদ্ধির সম্ভাব্য উৎসগুলো নিয়ে। বিশ্বব্যাপী এই মন্দার বাজারে লেবার পার্টি তার সম্ভাব্য আয়ের উৎসগুলো সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে পারছে না। ব্রিটেন কিংবা যুক্তরাজ্যের শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ১৯০০ সালে রামসে ম্যাকডোনাল্ডের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছিল লেবার পার্টি। তখন রক্ষণশীলরা লেবার পার্টির ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্ট হাসিঠাট্টা কিংবা বিদ্রুপ করেছে। তাদের এমন একটি ধারণা জন্মেছিল যে লেবার পার্টি হয়তো কোনো দিনই ক্ষমতায় যেতে পারবে না। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সে ধারণা সম্পূর্ণভাবে বদলে যায়। এই লেবার পার্টিই টনি ব্লেয়ার ও গর্ডন ব্রাউনের নেতৃত্বে একটানা ১৩ বছর ক্ষমতায় ছিল। তাঁদের আগে স্যার হ্যারল্ড উইলসন ও জিম ক্যালাহকা ক্ষমতায় ছিলেন দীর্ঘদিন।

এই বিষয়টি আবারও নিশ্চিত হয়ে গেছে যে সেদিনের শ্রমিক শ্রেণির প্রতিনিধিত্বকারী সেই লেবার পার্টিই এখন আবার ক্ষমতাসীন হতে যাচ্ছে। কিন্তু অনেকের ধারণা, শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থের প্রতিনিধিত্বকারী সেই লেবার পার্টি এখন আর নেই। সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে লেবার পার্টিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। কারো কারো মতে, সত্যিকার অর্থে লেবার পার্টি এখন শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে না। এই দলে এখন ভিড় জমিয়েছেন বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক নেতা, যাঁরা প্রকৃত অর্থে উঠতি বুর্জোয়া কিংবা ধনিক শ্রেণির মানুষ ও শিল্পপতি। সে কারণেই প্রকৃত শ্রমিক শ্রেণির প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁদের একটি সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়েছে। লেবার পার্টির নেতারা এখন রক্ষণশীলদের পাশাপাশি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের ক্রীড়নকে পরিণত হচ্ছেন ক্রমেই, যে কারণে জেরেমি করবিনের মতো প্রগতিশীল নেতাকে লেবার পার্টি থেকে অনেকটা ষড়যন্ত্র করেই বহিষ্কার করা হয়েছে। বাম ধারার কিংবা প্রগতিশীলদের এখন স্থান হচ্ছে না লেবার পার্টিতে। জেরেমি করবিন, টনিবেন কিংবা পিটার শোরের মতো মানুষের স্থান হচ্ছে না লেবার পার্টিতে। ইহুদিবাদী ইসরায়েলের গাজা আক্রমণ, গণহত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞের সময় লেবার পার্টির নেতাদের ভূমিকা রক্ষণশীলদের মতোই ছিল এক সূত্রে গাঁথা। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের তাঁবেদারিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়েছেন লেবার নেতারা। অবস্থা এমনই বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে যে লেবার নেতারা ওয়েস্টমিনস্টারে গাজায় যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। দখলদার ও গণহত্যাকারী ইসরায়েলকে যুদ্ধাস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহের বিরুদ্ধে রক্ষণশীল সরকারের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ কিংবা প্রতিরোধের ঝড় বইয়ে দিতে পারেননি। এ ব্যাপারে এখনো লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার স্পষ্ট করে কিছুই বলতে পারছেন না। তাঁর দল ক্ষমতাসীন হলে এ ব্যাপারে তিনি কী করবেন? লেবার পার্টির নেতা স্টারমার বরং পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলীকে ক্ষমতায় গেলে মন্ত্রী করার প্রতিশ্রুতিতে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত রেখেছেন। সে জন্য রুশনারার পূর্ব লন্ডন অফিস ঘেরাও করেছে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশি লেবার পার্টির সমর্থকরা। যে লেবার পার্টি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি আন্দোলনের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং গাজার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে অগ্রাহ্য করেছে, তেমন লেবার পার্টিতে তাঁদের কোনো প্রয়োজন নেই বলে তারা জানিয়েছে।

এ ঘটনায় বাংলাদেশি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের বেথলান গ্রিন ও বো নির্বাচনী এলাকায় মহা বিপদে পড়েছেন রুশনারা আলী। একদিকে নির্বাচনী এলাকা সমন্বয় বা বিভাজনের কারণে ১২ থেকে ১৪ হাজার নিশ্চিত ভোট হারিয়েছেন তিনি, অন্যদিকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির রাবিনা খান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমল মাশরুরের কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছেন রুশনারা। অপরদিকে পূর্ব লন্ডনের পপলার ও লাইম হাউস এলাকায় আপসানা বেগম কিছুটা নিশ্চিত হলেও বাংলাদেশিদের বিভিন্ন কঠোর প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন তিনিও। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি অপর প্রার্থী টিউলিপ সিদ্দিক কিছুটা ঝঞ্ঝামুক্ত বলে মনে হচ্ছে। তবে লেবার পার্টিতে শ্রমিক শ্রেণি কিংবা বিশ্বব্যাপী মুক্তিকামী মানুষের স্বার্থে এরই মধ্যে যে বিতর্ক, বিভাজন, মেরুকরণ কিংবা নতুন সমীকরণ শুরু হয়েছে, তাতে দলের ভেতরে একটি দ্বন্দ্ব ও সংঘাত অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় লেবার পার্টিকে শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থের অনুকূলে কিংবা প্রগতিশীল ধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কতটুকু সফল হবেন কিয়ার স্টারমার, তা কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না। লেবার পার্টির সর্বত্রই এখন যেন সব কিছু চেপে যাওয়ার একটি অঘোষিত কৌশল চলছে। কিন্তু কত দিন তা চলতে পারে, এ প্রশ্নই এখন সবার জিজ্ঞাস্য।

লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক

gaziulhkhan@gmail.com