প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বার ২০২৪ , ০৪:২৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো পৃথিবীর একক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে পুনরায় ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তিনি মোট ৫৩৮টি ইলেক্টরাল কলেজ ভোটের মধ্যে ৩৩২টি এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হারিস পেয়েছেন ২২৬টি ভোট। গত ৫ নবেম্বর (২০২৪) তারিখে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে মোট চারজন প্রার্থী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে রিপাবলিকান পার্টি থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প, ডেমোক্র্যাট পার্টি থেকে কমলা হারিস, গ্রীন পার্টি থেকে জিল স্টেইন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রবার্ট কেনেডি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। জিল স্টেইন এবং রবার্ট কেনেডি কেউই ইলেক্টরেল ভোট পাননি।
পপুলার ভোটের মধ্যে ট্রাম্প পেয়েছেন ৭,৪৬,৫০,৭৫৪টি মোট প্রদত্ত ভোটের ৫০.৫%), কমলা হারিস পেয়েছেন ৭,০৯,১৬,৯৪৬টি ভোট (৪৭.৯%), জিল স্টেইন ৬,৯৭,৪৮৯টি (০.৫%) এবং রবার্ট কেনেডি ৬,৭৬,৫০২ ভোট (০.৫%)। বলাবাহুল্য এই নির্বাচনে মোট প্রায় ১৮ কোটি ভোটারের মধ্যে ১৪,৬৯,৪১,৬৯১ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন।
মহিলা ভোটারদের মধ্যে ৫৩% কমলাকে এবং ৪৫% ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। অন্যদিকে সাদাদের ৫৭% ট্রাম্পকে ৪৩% কমলাকে ভোট দিয়েছেন। আবার কালোদের ৮৫% কমলাকে, ১৩% ট্রাম্পকে এবং এশিয়ানদের ৫৪% কমলাকে এবং ৩৯% ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো ভূমিধস বিজয়ের মাধ্যমে দুনিয়ার একক পরাশক্তি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় আমরা তাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই এবং আশা করি যে, তিনি ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।
এখন একটু পিছনে ফিরে যাই। দেশে বিদেশে ব্যাপক সহিংসতা, তীব্র বিতর্ক, প্রতিবাদ আর সমর্থকদের উচ্ছ্বাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি স্থানীয় সময় দুপুর বারোটায় ডোনাল্ড জে ট্রাম্প বাইবেলে হাত রেখে শপথ নিয়েছিলেন। ৩৫ শব্দের এই শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস।
অনেকের মতে ২০১৫ সালের ১৫ জুন কোটিপতি এই ব্যবসায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের যখন প্রার্থিতা ঘোষণা করেন তখন কম মানুষই মি. ট্রাম্পকে পৃথিবীর একক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেছিলেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন অত্যন্ত যোগ্য ও শক্ত। কিন্তু তা সত্ত্বেও নারীদের শীর্ষ পদে নিয়োগ ও নির্বাচন নিয়ে মার্কিনীদের চিরাচরিত অনীহা-ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করে অনেকেই তখন বলেছিলেন যে, শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পই জিতবেন এবং তাই হয়েছে। মি. ট্রাম্প নারী বিদ্বেষেরও পরিচয় দিয়েছেন এবং নারীদের সম্পর্কে তার অশালীন মন্তব্য বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। তার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের দিন এবং তার পরদিন যুক্তরাষ্ট্রসহ দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ নারী রাস্তায় নেমে এসে ট্রাম্প বিরোধী বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন এবং স্লোগান দিয়েছেন। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তার অবমাননাকর বক্তব্যও নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। তবে ভারতসহ কয়েকটি দেশে তার শপথ গ্রহণকে অভিনন্দন জানিয়ে মানুষ নানা উৎসবে নেমে পড়েছিলেন বলেও জানা যায়। তবে একথা সত্য যে, তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিনন্দন পাবার যোগ্য। আমি তাকে অভিনন্দন জানাই।
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর মার্কিন রাজনীতির বিশ্লেষকরা বলেছিলেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি নতুন কিছু ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, যেমন : তিনি নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরাসরি বিদেশী সরকারসমূহের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন, যা মার্কিন সংবিধানের পরিপন্থী। এ জন্য হোয়াইট হাউসের কয়েকজন আইনজীবী তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। গত জুন মাসে তিনি ৭৭তম জন্মদিবস পালন করেছেন, ইতঃপূর্বে আরো একজন বয়স্ক প্রেসিডেন্ট সে দেশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তিনি হচ্ছেন রোনাল্ড রিগ্যান। ১৯৮১ সালে দায়িত্ব নেয়ার সময় তার বয়স ছিল ৬৯ বছর। বয়স নিয়ে কথা উঠতে পারে ভেবেই তিনি ডাক্তার দিয়ে একটি সার্টিফিকেট লিখিয়ে নিয়েছিলেন যাতে ডা. হেরাল্ড বর্নস্টেইন মি. ট্রাম্পকে এ যাবৎ জয়লাভ করা প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচাইতে স্বাস্থ্যবান প্রেসিডেন্ট বলে উল্লেখ করেছেন। বলাবাহুল্য যুক্তরাষ্ট্রে ইতঃপূর্বে দায়িত্ব পালন করা ৪৪ জন প্রেসিডেন্টের গড় বয়স ছিল ৫৫ বছর, সবচেয়ে কম বয়স ছিল প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্টের, ৪৩ বছর। জনাব ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে অন্যান্য ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে :
# ট্রাম্পের শপথগ্রহণের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্যে লাখ লাখ লোকের বিক্ষোভ, বিক্ষোভকারীরা গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে এবং লুটপাট করেছে।
# বিবিসির টুইটার হ্যাক হয়েছে এবং ট্রাম্পকে গুলীর খবর পাওয়া গেছে।
# ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার সবচেয়ে বেশি সম্পদশালী প্রেসিডেন্ট, তার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ৩৭০ কোটি ডলারের বেশি। তার মা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন একজন গৃহকর্মী হিসেবে। এর আগে ঐ দেশে অনেক ধনী প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আজকের ডলারের মানে জর্জ ওয়াশিংটনের সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০ কোটি ডলার। মি. ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাসে ১ ডলার বেতন নিবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
# তিনি তার যে মন্ত্রিসভা ঘোষণা করেছিলেন ইতিহাসে তা সবচেয়ে ধনী মন্ত্রিসভা হিসেবে পরিগণিত হয়। ওয়াশিংটন পোস্টের হিসাব অনুযায়ী বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত মি. উইবার রসের সম্পদের পরিমাণ আড়াইশ’ কোটি ডলারের সমপরিমাণ। বলা হয় যে, তার একার সম্পদই ২০০১ সালে জর্জ বুশের গঠিত মন্ত্রিসভার সকল সদস্যের সম্পদের দশ গুণ। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ট্রাম্প মন্ত্রিসভার সকল সদস্যের মিলিত সম্পদের পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলারের বেশি হবে।
# মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গত প্রায় ৭ দশকের ইতিহাসে ট্রাম্পই হচ্ছেন সম্ভবত একমাত্র প্রেসিডেন্ট যার রাজনৈতিক কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না, যিনি কোনো অঙ্গরাজ্যের গভর্নর অথবা কংগ্রেস সদস্য হিসেবে কাজ করেননি। অবশ্য এর আগে ১৯৫৩ সালে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আইসেন হাওয়ারেরও কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তবে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে Allied Force -এর সুপ্রিম কমান্ডার ছিলেন। অপর একজন প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুভার ছিলেন একজন প্রকৌশলী ও মানবতাবাদী।
# মি. ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর তার মেয়ের জামাই জেরেড কুশনারকে সিনিয়র উপদেষ্টা নিয়োগ করে স্বজনপ্রীতির অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।
# প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মুক্ত বাণিজ্যের সম্পূর্ণ বিরোধী। তার ভাষায় মুক্ত বাণিজ্যের কারণেই আমেরিকানদের এখন কোনও কাজ নেই। তার এই শ্লোগান আমেরিকানদের তার প্রতি যথেষ্ট আকৃষ্ট করেছে বলে মনে করা হয়। তিনি চীন বিরোধী। তিনি মনে করেন ‘চীন আমেরিকানদের মেরে ফেলছে।’ চীনাদের ‘খেলা বন্ধ’ করবার জন্য তিনি ১২% পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করতে প্রস্তুত আছেন বলে ‘ইকোনমিস্টকে’ জানিয়েছেন।
# প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত। তিনি সারা দুনিয়ায় ইসলামী সন্ত্রাস বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ইসলামী সন্ত্রাস বলতে তিনি কি বুঝিয়েছেন তা অবশ্য পরিষ্কার নয়। কেননা ইসলাম সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। সন্ত্রাসী হিসেবে মুসলমান ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও রাষ্ট্রকে সন্দেহ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো গত কয়েক দশক ধরে যে তাণ্ডব চালিয়েছে তার যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। জাতিসংঘের তদন্ত রিপোর্টে পরিষ্কার নেতিবাচক তথ্য থাকা সত্ত্বেও সাদ্দাম হোসেনের কাছে মানবতা বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে এই মিথ্যা ধারণার ভিত্তিতে মার্কিন যুুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাক বিজয় এবং সাদ্দামের হত্যা প্রমাণ করেছে যে, ইরাকের ৫০ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের স্বর্ণ এবং তেল সম্পদ দখল করাই ছিল ইরাক আক্রমণের মূল লক্ষ্য। নাইন ইলেভেনের সাথে সাদ্দামের সম্পৃক্ততাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর পর তারা আফগানিস্তান আক্রমণ করেছে, লক্ষ লক্ষ লোক হত্যা করে তাদের বাড়িঘর ও সামাজিক অর্থনৈতিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে। উদ্দেশ্য ছিল পপি ক্ষেত ও লিথুয়াম খনি নিরাপদ রাখা। বলাবাহুল্য, তালেবানরা আগেই পপি ক্ষেত ও পপি চাষ ধ্বংস করে দিয়েছিল। আফগানিস্তান ধ্বংস করে তারা লিবিয়াকে ধ্বংস করে। উদ্দেশ্য ছিল গাদ্দাফির ২২ টনেরও বেশি স্বর্ণ এবং ৩০ ট্রিলিয়নের বেশি ডলার সমমূল্যের রিভার পাইপলাইনের দখল নেয়া, তেল হিরা জহরত ও রোপ্য সম্পদ তো আছেই। সারা দুনিয়ায় তারা স্বর্ণ, রৌপ্য, তেল, মাদক সামগ্রী এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য যুদ্ধ করছে এবং গণহত্যা চালাচ্ছে আর সন্ত্রাসের দোষ দিচ্ছে মুসলমানদের উপর। মুসলমান মুসলমানে যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়ে উভয়পক্ষের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে চুটিয়ে ব্যবসা করছে। কি বিচিত্র তাদের স্বভাব! আর আমরাও একটা গ্রুপ তাদের সাথে কণ্ঠলগ্ন হয়ে নাচানাচি করছি।
আমার বিশ্বাস দায়িত্ব গ্রহণের আগে ও পরে মানুষের ধ্যান ধারণার পরিবর্তন হয়। দায়িত্বের বোঝা দায়িত্বশীল করতে তাকে সাহায্য করে। বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও বৈষয়িক অভিজ্ঞতা প্রচুর; তা না হলে তিনি শত শত কোটি ডলার সম্পত্তির মালিক হতে পারতেন না। পরাশক্তির প্রধান হিসেবে সারা দুনিয়ার প্রতি তার দায়িত্ব অপরিসীম। ইনসাফ, মানবতা ও বাস্তবতাকে সামনে রেখে তিনি সকল জাতিগোষ্ঠী ও ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি সুবিচার করবেন এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবেন বলে আমি মনে করি। তার দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলো সারা বিশ্বে মুসলমানদের উপর যে অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছে ও তার ইন্ধন দিচ্ছে আমরা তার অবসান কামনা করি। ইসলাম সন্ত্রাসের ধর্ম নয় শান্তির ধর্ম, যারা সন্ত্রাস করে গণহত্যা চালায় তাদের সাথে ইসলামের সম্পর্ক নেই। তার দেশেরই সরকারি সংস্থা এফবিআই-এর সাক্ষ্য। তাদের ২০১৪ সালের এক রিপোর্টে তারা প্রকাশ করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে পাঁচ বছরে যত সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে তার পাঁচ শতাংশের কম ঘটনার জন্য দায়ী মুসলমানরা। এর মধ্যে মাত্র তিন শতাংশ ঘটনা আছে যার জন্য দায়ী সোমালিয়া, ফিলিস্তিন, কাশ্মীরসহ বিভিন্ন মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার নির্যাতিত ব্যক্তিরা যারা তাদের অবস্থাকে দুনিয়ার সামনে হাইলাইট করার জন্য এই জঘন্য কাজ করেছে। আবার দুই শতাংশের কম ব্যক্তি আছে যারা সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত ছিল সন্ত্রাসী হিসেবে, ধর্মীয় কারণে নয়।
আর কে না জানে যে, আইএস বা ইসলামিক স্টেট নামে যে প্রতিষ্ঠান সিরিয়াসহ দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাস করছে তার আর্কিট্যাক্ট মুসলমানরা নয়, ইহুদী খৃস্টানরা। এই সত্য কথাটি বিশ্বের শক্তিধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই জানতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসীদের দেশ, এটাও তাকে জানতে হবে। আমরা তার কাছ থেকে অনেক কিছু প্রত্যাশা করি। তিনি যদি অজ্ঞতা নিয়ে দেশ চালান তাহলে সোভিয়েত রাশিয়ার ভাগ্য যুক্তরাষ্ট্রকেও বরণ করতে হবে। তার অভিষেক উপলক্ষে এর অনেক লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়েছে।
গ্রহণ করার পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন মুসলমানদের আচরণ, ধর্মীয় ও সামাজিক জীবন, আইন-শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা, নাগরিক মূল্যবোধ, প্রতিবেশীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, পারিবারিক বন্ধন এবং পিতা-মাতার অধিকার আদায় ও তাদের সুরক্ষা প্রদান প্রভৃতির উপর এফবিআই (Federal Bureau of Investigation) কর্তৃক সম্পাদিত তদন্ত রিপোর্ট দেখে নিশ্চয়ই বিস্মিত হবেন। পনের হাজার গোয়েন্দা/তদন্ত কর্মী দিয়ে প্রায় দু’দশক ধরে তথ্য সংগ্রহ করে তারা এই রিপোর্টটি তৈরি করেছেন। এতে বলা হয়েছে যে, মার্কিন মুসলমানরা সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে সমৃদ্ধ মার্জিত রুচির একটি সাংস্কৃতিক সত্তা, সন্ত্রাস নৈরাজ্য তাদের আচার-আচরণের অন্তর্ভুক্ত নয়। আমার বিশ্বাস, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যারা মুসলিম বিদ্বেষী বলে মনে করেন এই রিপোর্টটি তার ভ্রান্ত ধারণা নিরসনে তাকে সাহায্য করবে।
তার প্রথম মেয়াদ শেষে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি সহজে উক্ত পরাজয় মেনে নেননি। জোসেফ বাইডেনের অভিষেক ও ক্ষমতাগ্রহণকে কেন্দ্র করে সারা যুক্তরাষ্ট্র অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল। রাজধানী ওয়াশিংটন যুদ্ধ নগরীতে রূপান্তরিত হয়। এই নগরীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ন্যাশনাল গার্ড ছাড়া আর কাউকে চলাচল করতে দেখা যায়নি। শ্বেতাঙ্গ অশ্বেতাঙ্গ দ্বন্দ্ব চরমে উঠে এবং দেশটি গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছিল। ওয়াশিংটন ডিসির নিরাপত্তায় ২৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ড নিয়োগ করতে হয়েছিল।
মার্কিন গণতন্ত্রের প্রাণকেন্দ্র ক্যাপিটল হিলের উপর একদল সন্ত্রাসী আক্রমণ পরিচালনা করে। তাদের হামলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলীতে পাঁচজন লোক নিহত হয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা নির্বাচনী রায় প্রত্যাখ্যান করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসীদের দেশ। এই দেশটি সাদা কালোতে বিভক্ত হয়ে একটি বর্ণবাদী দেশে পরিণত হয়েছিল। এই সন্ত্রাস নৈরাজ্য ও দেশের ঐক্য সংহতি বিনাশী কর্মকাণ্ডের জন্য ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুই ডজনেরও বেশি মামলা রুজু হয়। দু’টি মামলায় তার জেল জরিমানাও হয়। এই পটভূমিকায় তিনি শাস্তি ও মামলা মাথায় নিয়েই এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তার প্রধান শ্লোগান ছিল দু’টি; আমেরিকা আমেরিকানদের জন্য। তিনি অভিবাসনের বিরোধী। দুই, তিনি ব্যবসায়ী শিল্পপতি হিসেবে মার্কিন শিল্পের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিবেদিত প্রাণ। এজন্য প্রয়োজনবোধে তিনি আমদানি পণ্যের উপর দশ থেকে বিশ শতাংশ Protection Tariff আরোপে বিশ্বাসী। তার ধারণা চীন মার্কিন অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাদের প্রতিহত করতে হবে এবং এজন্য Protection Tariff একটি কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে।
এই নির্বাচনে তিনি চারণের মতো সারা যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেছেন এবং ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। তার প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জো বাইডেন। নির্বাচনের অল্প কিছুদিন আগে তিনি প্রার্থীপদ পরিত্যাগ করে কমলা হারিসকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সমর্থন করেন। এটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়কে সহজ করে দেয়। আবার অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও অভিবাসন সম্পর্কিত তার অবস্থানকেও মার্কিনীরা পছন্দ করেছে এবং এটিও তার বিজয়ের একটি অন্যতম কারণ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রিপাবলিকান দল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, সিনেট তাদের নিয়ন্ত্রণেই শুধু যায়নি বরং হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভও তারা দখলে নিয়ে নিয়েছেন। মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান আধিপত্যের প্রেক্ষাপটে বলা যায় যে, সরকারের সকল শাখা প্রশাখাই এখন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার দল রিপাবলিকান পার্টির কব্জায় চলে আসবে। যারা ট্রাম্পকে ফ্যাসিবাদী প্রতিক্রিয়াশীল বলে গালি দিতেন তারা দেখেছেন যে, এবারের মার্কিন নির্বাচনে ফ্যাসিবাদের কোনও চরিত্রই দেখা যায়নি, কোথাও বলপ্রয়োগ বা জাল ভোট দেয়ার কথাও শোনা যায়নি। অবশ্য আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের বেশির ভাগই তার দু’টি নীতি তথা অভিবাসন বিরোধী মতবাদ ও শুল্কারোপের বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দিহান। তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো অভিবাসীদের দেশে অভিবাসী নীতি তার জন্য আত্মঘাতী প্রমাণিত হতে পারে। এই নীতি কার্যকর করা হলে অভিবাসী ভিত্তিক কলখারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। দ্বিতীয়তঃ মার্কিন নারীদের বিদ্যমান সন্তান গ্রহণের যে হার তা অত্যন্ত অসন্তোষজনক। সেই দেশের মেয়েরা সন্তান নিতে চান না, ছেলেরা দায়িত্ব নেয়ার ভয়ে বিয়ে সাদী বাদ দিয়ে অনৈতিক লিভ টুগেদারে বিশ্বাসী হয়ে পড়েছে। ছেলেমেয়েরা স্বামী বা স্ত্রীর পরিবর্তে কুকুরকে বেশি পছন্দ করে। এই অবস্থায় বৃদ্ধ জনসংখ্যার অবসর ভাতা যোগানোর জন্য যে কর্মঠ জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন তা পূরণের জন্য অভিবাসন ছাড়া তাদের গত্যন্তর নাই। তৃতীয়তঃ প্রটেকশান ট্যারিপের ধারণাটি মুক্ত বাণিজ্যের বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান ব্যবস্থার পরিপন্থী। ক্ষমতায় গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। আবার অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায় তার আমলে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে ড্রাষ্টিক পরিবর্তন আসার সম্ভাবনাও খুব কম।
জনাব ট্রাম্প কবে শপথ নিবেন তা এখনো নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। বিবিসির এক রিপোর্ট অনুযায়ী আদালত প্রদত্ত শাস্তি মেনে নিয়ে তিনি প্রথম জেলে যাবেন। কারা মেয়াদ শেষে শপথ নেবেন। তার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো রয়েছে পরবর্তীকালে সেগুলো প্রত্যাহার হবে বলেও সংস্থাটি জানিয়েছে, আমরা নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে জনাব ট্রাম্প-এর শুভ কামনা করি।