এখন সময় ডেস্ক :

প্রকাশিত: ০৩ মে ২০২৫ , ০২:০৯ এ এম

অনলাইন সংস্করণ

আক্রমণ হলে ভারতকে চূড়ান্ত জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি পাক সেনাবাহিনীর

কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লির উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার যেকোনো ভারতীয় প্রচেষ্টার ‘নিশ্চিত ও চূড়ান্ত’ জবাব দেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। খবর দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে বলা হয়, দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে আজ শুক্রবার (২ মে) রাওয়ালপিন্ডিতে জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সে (জিএইচকিউ) সেনাবাহিনী প্রধান (সিওএএস) জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনিরের সভাপতিত্বে একটি বিশেষ কর্পস কমান্ডারদের সম্মেলন (সিসিসি) অনুষ্ঠিত হয়।

গত ২২ এপ্রিল ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের (আইআইওজেকে) পেহেলগামে হামলার পরবর্তী উত্তেজনার মধ্যে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। ঐ হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। ভারত কোনো প্রমাণ উপস্থাপন না করেই এ ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। তবে ইসলামাবাদ স্পষ্টভাবে এতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে এবং ‘বিশ্বাসযোগ্য ও স্বচ্ছ তদন্তে’ সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে।

এ হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যার মধ্যে রয়েছে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা, পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা বাতিল করা এবং ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত বন্ধ করা। প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তান ভারতীয় কূটনীতিক ও সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার করে, শিখ তীর্থযাত্রীদের বাদ দিয়ে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ভিসা বাতিল করে এবং সীমান্ত বন্ধ করে দেয়।

সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনিরের সভাপতিত্বে সামরিক শীর্ষ নেতৃত্বের এই বিশেষ অধিবেশনে পাকিস্তান-ভারত অচলাবস্থা এবং বৃহত্তর আঞ্চলিক নিরাপত্তা উদ্বেগের ওপর আলোকপাত, পাশাপাশি বিরাজমান ভূ-কৌশলগত পরিস্থিতির একটি বিশদ পর্যালোচনা করা হয়।

এ সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘যেকোনো আগ্রাসন বা দুঃসাহসিকতার বিরুদ্ধে দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা বজায় রাখার জন্য অটল সংকল্প’ পুনর্ব্যক্ত করেছে।

সেনাপ্রধান আসিম মুনির সশস্ত্র বাহিনীর ‘অটল পেশাদারিত্ব, দৃঢ় মনোবল ও আভিযানিক প্রস্তুতির’ প্রশংসা করেন এবং ‘যেকোনো মূল্যে স্বদেশ রক্ষার’ জন্য পাকিস্তানের জনগণের সঙ্গে ঐক্যের ওপর জোর দেন। তিনি ‘সব ফ্রন্টে উচ্চতর সতর্কতা ও সক্রিয় প্রস্তুতির’ ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

বৈঠকে বিশেষ করে পেহেলগাম হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় নৃশংসতার তীব্রতা বৃদ্ধির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া ‘ভারতীয় দখলদার বাহিনী নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের অব্যাহত লক্ষ্যবস্তু করার’ নিন্দা জানানো হয়।

আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ ধরনের অমানবিক ও অপ্রীতিকর কর্মকাণ্ড কেবল আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করে এবং এজন্য একটি দৃঢ় ও আনুপাতিক প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান হয়।’

পাকিস্তানের সেনা কমান্ডাররা ভারতের ‘রাজনৈতিক ও সামরিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংকটের ধারাবাহিক ব্যবহারের ধরনের’ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তারা এটিকে ‘একটি পূর্বাভাসযোগ্য টেমপ্লেট অনুসরণের অভিযোগ করেন, যার মাধ্যমে (ভারতের) অভ্যন্তরীণ শাসন ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করা হয়’ বলে উল্লেখ করেন।

আইএসপিআরের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘এই ঘটনাগুলো প্রায়শই ভারতের স্থিতিশীল অবস্থার পরিবর্তনের জন্য নেওয়া একতরফা পদক্ষেপের সঙ্গে মিলে গেছে, যেমনটি দেখা গেছে ২০১৯ সালে, যখন ভারত একইভাবে পুলওয়ামা ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে (সংবিধানের) ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরে স্থিতাবস্থা (আধা-স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা) একতরফাভাবে পরিবর্তন করেছে।’

চলমান ঘটনাপ্রবাহের বিষয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বলেছে, পেহেলগাম হামলা ‘পশ্চিমাঞ্চলীয় যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের চলমান জাতীয় প্রচেষ্টা থেকে পাকিস্তানের মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার জন্য (ভারতের) ইচ্ছাকৃত কৌশলের অংশ বলে মনে হচ্ছে; দুটি ক্ষেত্রেই পাকিস্তান চূড়ান্ত ও টেকসইভাবে ভিত্তি অর্জন করছে।’

‘ভারতীয় প্রক্সি সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে এই ধরনের বিচ্যুতিমূলক কৌশল কখনোই সফল হবে না’, উল্লেখ করে আইএসপিআর।

সেনাবাহিনী আরও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, ভারত সিন্ধু পানি চুক্তিকে দুর্বল করার জন্য পেহেলগাম ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এটি পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের একটি বিপজ্জনক প্রচেষ্টা, যা ২৪ কোটিরও বেশি পাকিস্তানির জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য হুমকিস্বরূপ। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত অস্থিতিশীলতাও বৃদ্ধি করছে।’

এ ছাড়া শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বৈঠকে ‘পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ভারতীয় সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থার সরাসরি জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে’। এগুলোকে ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় করা কর্মকাণ্ড’ এবং ‘আন্তর্জাতিক নিয়মের স্পষ্ট লঙ্ঘন, যা সর্বজনীনভাবে অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।

পাকিস্তানের দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করে সেনাবাহিনী বলেছে, ‘ভারত সরকারের ইচ্ছাকৃত অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা দৃঢ় সংকল্প ও স্বচ্ছতার সঙ্গে মোকাবিলা করা হবে এবং (তাদের) পরাজিত করা হবে।’

বৈঠকটির শেষ পর্যায়ে সেনাপ্রধান আসিম মুনির ‘সমগ্র হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে জাতিকে রক্ষা করার কৌশলগত বাহিনীর আভিযানিক প্রস্তুতি, প্রতিরোধমূলক অবস্থান ও মনোবলের ওপর সম্পূর্ণ আস্থা’ প্রকাশ করেন।