ছোট ছোট চলচ্চিত্র। ভিন্ন ভিন্ন গল্প। এসব চলচ্চিত্রে নির্মাতারা তুলে ধরেছেন চলমান সমাজ, জীবন ও বাস্তবতা। বয়সের তুলনায় নির্মাতাদের অনেকের হাত বেশ পাকা হলেও কেউ কেউ এই প্রতিযোগিতাকে সামনে রেখেই নিজেদের প্রথম নির্মিত চলচ্চিত্রটি জমা দিয়েছেন।

ঢাকার বাইরে থেকে আসা নির্মাতাদের চলচ্চিত্র দেখে খোদ বিচারকরাই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
গতকাল শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ‘৩ মিনিটের চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা ও উৎসব ২০২২’ উপলক্ষে নির্মাতাদের মিলনমেলা বসেছিল। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রদর্শিত হয় ৬৪টি চলচ্চিত্র। শিল্পকলা একাডেমির আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত বছর নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২০০টি চলচ্চিত্র জমা পড়ে। সেখান থেকেই প্রদর্শনীর জন্য ৬৪টি চলচ্চিত্র বেছে নেওয়া হয়। শিশু, যুব ও উন্মুক্ত বিভাগে পুরস্কৃত করা হয় মোট ১৩ জনকে।

গতকাল বিকেল ৩টায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। উৎসবে নির্বাচিত চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী চলে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। বিরতির পর রাত ৮টার দিকে একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জুরিবোর্ডের চেয়ারম্যান, শিক্ষক ও নির্মাতা মানজারেহাসীন মুরাদ।

মানজারেহাসীন মুরাদ বলেন, ‘আজ যে তরুণ নির্মাতাদের ছবি আমরা দেখলাম তা খুব উৎসাহ-জাগানিয়া। এখানে বহু তরুণ গুণী ও প্রতিভাবান নির্মাতার দেখা পেয়েছি। গল্প, নির্মাণকৌশল ও বার্তার কারণে প্রদর্শিত প্রতিটি চলচ্চিত্রই শিল্পগুণে উত্তীর্ণ। তিন মিনিটের চলচ্চিত্র আহ্বানের কারণ শুধু স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণে উৎসাহিত করা নয়, এটি চলচ্চিত্র নির্মাণে নান্দনিকতায় উজ্জ্বল আলাদা একটি ধারা। এটি কোনো অর্থেই বড় ছবির ছোট সংস্করণ নয়। এখানে নির্মাতাদের তিন মিনিট বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এতে সময় অনুযায়ী উপযোগী গল্প ও ভাষা প্রয়োগ করতে পেরেছেন বেশির ভাগ নির্মাতা। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। ’

উৎসবে ৬৪টি চলচ্চিত্রের মধ্যে শিশু বিভাগে আটটি, যুব বিভাগে ২০টি এবং উন্মুক্ত বিভাগে ৩৬টি চলচ্চিত্র নির্বাচিত ও প্রদর্শিত হয়।

শিশু বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে যথাক্রমে সৈয়দা আবরার তোয়াহা দ্রাহা (হেল্প), অপরাজিতা পারিন (রিক্ত) ও ফারহানুর ইমতিয়াজ (কেউ দায়ী নয়)। যুব বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন যথাক্রমে সুব্রত কুমার মুণ্ডা (কপোতাক্ষের গান), শরিফুল আবির (কালাচোর) ও প্রাণ কৃষ্ণ বণিক (আ ফোবিয়া)। এই বিভাগে নাশিবা সামারাত (কেইস ১৯১১৯) ও কনোজ কান্তি রায় (অমৃতের পুত্র) পেয়েছেন জুরি পুরস্কার। উন্মুক্ত বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন যথাক্রমে মনির হোসাইন (হিসাববিজ্ঞান), জায়েদ সিদ্দিকী (ইন এক্সপিডিশন টু হ্যাপিনেস) ও মো. আবিদ মল্লিক (গায়েব)। জুরি পুরস্কার পেয়েছেন জগন্ময় পাল (রকি দ্য সি কিড) ও পুলক রাজ (ললাট)। প্রতি বিভাগের প্রথম পুরস্কারজয়ীরা ৫০ হাজার, দ্বিতীয় পুরস্কারজয়ীরা ৪০ হাজার

এবং তৃতীয় পুরস্কারজয়ীরা ৩০ হাজার টাকা করে পেয়েছেন। আর জুরি পুরস্কারজয়ীদের প্রতিজনকে দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার টাকা।

নির্বাচক কমিটিতে সদস্য হিসেবে ছিলেন বিসিটিআইয়ের শিক্ষক সাজ্জাদ জহির, বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান, একাডেমির চলচ্চিত্র ও নাট্যকলা বিভাগের সহপরিচালক চাকলাদার মোস্তফা আল মাসউদ। আর বিচারক হিসেবে ছিলেন নির্মাতা মানজারেহাসীন মুরাদ, জাহিদুর রহিম অঞ্জন, আকরাম খান এবং শিল্পকলা একাডেমির চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক ও অভিনেত্রী আফসানা মিমি।