বাংলাদেশে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার এক বাড়িতে শিয়াল জবাই করা হবে এমন খবরে শুক্রবার বাড়িটিতে হানা দিয়েছিলো প্রশাসন ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

পরে চর ফলকন গ্রামের সেই বাড়ি থেকে একটি শিয়াল উদ্ধার করে শুক্রবারই জঙ্গলে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান।

তবে শেষ পর্যন্ত জানা যায়, শিয়ালটি জবাইয়ের উদ্দেশ্যে নয়, বরং এটি গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই পরিবারেই পোষা প্রাণীর মতো করে লালিত পালিত হচ্ছিলো।

“শিয়াল একটা বন্যপ্রাণী। এটি ঘরে আটকে রাখা আইনসিদ্ধ নয়। সেজন্য আমরা খবর পেয়ে বনবিভাগকে অবহিত করেছিলাম। তারা গিয়ে শিয়ালটি নিয়ে এসে বনে অবমুক্ত করেছে,” বলছিলেন তিনি।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ শেয়ালই পাতিশেয়াল ও ছোট আকারের খেঁকশেয়াল প্রজাতির।

বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী প্রাণীটিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে শুক্রবার এই শিয়াল উদ্ধার নিয়েই সেখানে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেছে। কারণ শিয়ালটি আসলে ওই পরিবারের সদস্য এক বছর ধরে লালন পালন করছিলো।

মোঃ রুবেল ও হাসিনা আক্তারের পরিবারটি মূলত একসময় বেদে পরিবার ছিলো। কয়েক বছর ধরে তারা ফলকন গ্রামে থিতু হয়েছেন।

তাদের দুই সন্তান কিন্তু দুজনই প্রতিবন্ধী।

মোঃ রুবেল বলছেন, এক বছর আগে তারা দুটি শিয়ালের বাচ্চা কিনেছিলেন পরিবারে লালন পালনের জন্য।

“একটি শাবক মারা যায়। আরেকটিকে আমি গরীব হয়েও দুধ, মাছ, মাংস খাইয়ে বড় করছিলাম। ২২০০ টাকা দিয়ে খাঁচা বানিয়েছি। আমার দু’সন্তানের কাছে সে ছিলো বন্ধুর মতো। কে বা কারা প্রশাসনের কাছে এ নিয়ে উল্টা পাল্টা বলায় তারা এটি নিয়ে গেছে। এরপর থেকে দু বাচ্চার কান্না থামছে না,” বলছিলেন তিনি।

কিন্তু শিয়াল তো বন্যপ্রাণী এবং এটি ঘরে লালন পালন আইনত অপরাধ – এ বিষয়টি তিনি জানতেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি ভাই গরীব মানুষ। বিক্রি হচ্ছিলো। শখ করে কিনছিলাম। বাচ্চা দু’টা খুব খুশী হয়েছিলো। ওদের খুব প্রিয় ছিলো এটা।

“আরেকটু বড় হলো দরকার হলে চিড়িয়াখানায় দিয়া আসতাম। কিন্তু এভাবে নিয়ে গেলো খুব কষ্ট লাগছে”।

মোঃ রুবেলের স্ত্রী হাসিনা আক্তার ঘরে শিয়ালটির দেখভাল করতেন। শুক্রবার দুপুরে বনবিভাগের কর্মকর্তারা তার বাড়ি গিয়ে শিয়ালটি নিয়ে আসার পর তিনি ও তার দুই প্রতিবন্ধী সন্তান ছুটে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে।

সেখানে শিয়ালের জন্য তার কান্নার দৃশ্য ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় এবং এ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বনবিভাগের কর্মকর্তারা তাকে বুঝিয়ে আবার বাড়িতে ফেরত পাঠান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান বলছেন, “পরিবারটি গরীব। আমরা তাৎক্ষনিকভাবে তাদের সহায়তা দিয়েছি। আর বলেছি, সরকারিভাবে আসা ভেড়া বা ছাগল দিয়ে তাদের সহায়তা করা হবে।”

মোঃ রুবেল বলছেন, শিয়াল হারিয়ে তার দুই সন্তানের কান্নাই থামানো যাচ্ছে না। তাই আজ শনিবার সকালে তাদেরকে তাদের মা হাসিনা আক্তারসহ এক নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

এখন সময়/শামুমো