রুশ ভাড়াটে যোদ্ধাদের সংগঠন ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের মৃত্যুর খবরের পর থেকে জল্পনা চাউর হয়েছে তাকে হত্যার নির্দেশ রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে প্রিগোজিনকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে পশ্চিমা বিভিন্ন কর্মকর্তা।

ওয়াগনারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলা হয়, প্রিগোজিনের ব্যক্তিগত বিমানটিতে গুলি করে ভূ-পাতিত করেছে রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

গ্রে জোন নামে একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলের একটি পোস্টে বলা হয়, প্রিগোজিন রাশিয়ার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করার পদক্ষেপের ফল স্বরূপ মারা গেছে। গ্রে জোন চ্যানেলটি ওয়াগনার গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

এ ছাড়া মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সাবেক কর্মকর্তা ড্যানিয়েল হফম্যান দাবি করেছেন, প্রিগোজিনের মৃত্যু অবশ্যই পুতিনের নির্দেশে হয়েছে। সিআইএর মস্কো স্টেশনের সাবেক এই প্রধান বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই পুতিনের নির্দেশেই প্রিগোজিনের হত্যা করা হয়েছে।’

তবে এসব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে দেশটি। আজ শুক্রবার বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বিবিসিকে বলেছেন, প্রিগোজিনকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল ক্রেমলিন- এমন অভিযোগ ‘পুরোপুরি মিথ্যা’।

বিবিসির সাংবাদিক উইল ভার্ননকে শুক্রবার পেসকভ বলেন, মস্কোর কাছে প্রাইভেট বিমান বিধ্বস্ত এবং যাত্রীদের মারা যাওয়ার ঘটনা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। পশ্চিমাদের ক্ষেত্রে এ সমস্ত জল্পনা অবশ্যই নির্দিষ্ট একটি দৃষ্টিকোণ থেকেই হচ্ছে। এগুলো সবই সম্পূর্ণ মিথ্যা। অবশ্যই যখন আমরা এ বিষয়ে কথা বলছি, তখন আমাদের প্রকৃত ঘটনাটাই বলা উচিত।

তিনি এ সময় আরও বলেছেন, এই মুহূর্তে আমাদের কাছে এ নিয়ে বেশি তথ্য নেই। সরকারি তদন্তের মধ্য দিয়ে প্রকৃত ঘটনাটি স্পষ্ট করে জানা দরকার।

এদিকে প্রিগোজিনকে বহনকারী জেট বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার খবরের ২৪ ঘণ্টা পর শেষমেশ পুতিন এ নিয়ে কথা বলেছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, প্রিগোজিন একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি ছিলেন কিন্তু জীবনে অনেক ভুল করেছেন। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমান বিধ্বস্তে নিহত ১০ জনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন পুতিন।

গত বুধবার সন্ধ্যায় মস্কোর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিধ্বস্ত হয় প্রিগোজিনকে বহনকারী বিমান। তবে পুতিন স্পষ্টভাবে প্রিগোজিনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে কিছু বলেননি।

বিমান বিধ্বস্তের পর ক্রেমলিন পুরোপুরি নীরব ভূমিকা পালন করেছে। পরের দিন সকালে প্রেসিডেন্ট পুতিন দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হওয়া ব্রিকস সম্মেলনে বক্তব্যও রেখেছেন। কিন্তু তিনি বিমান বিধ্বস্ত হওয়া নিয়ে কোনো কথা বলেননি, যদিও পুরো বিশ্বে এই বিষয়টি নিয়ে চর্চা হচ্ছিল।

তবে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেটি পরিবর্তিত হয়ে যায়। ক্রেমলিনে প্রেসিডেন্ট পুতিন একটি বৈঠক করছিলেন, যেটি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়। তখন পুতিন বলেন, আমি নিহত সবার পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাতে চাই।

তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক তথ্য বলছে যে বিমানটিতে ওয়াগনারের কর্মীরা ছিলেন।