পাকিস্তানে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে গণনায় নজিরবিহীন ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে ফলাফল ঘোষণায়ও লাগছে দীর্ঘ সময়।

এই বিস্ময়কর ধীরগতির মাধ্যমে ফল কারচুপি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের নেতারা। যদিও এখন পর্যন্ত পাওয়া বেসরকারি ফলাফলে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরই এগিয়ে থাকার খবর মিলেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলে। ভোট ঘিরে বন্ধ করে দেওয়া হয় মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা, যা নিয়ে পাকিস্তানের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও উৎকণ্ঠার খবর প্রচার হয়েছে।

ভোটগ্রহণ শেষে গণনা শুরু হলেও তা চলে অনেক ধীরগতিতে। ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার প্রায় নয় ঘণ্টা পর প্রথম ফল ঘোষণা হয়। এরপর ধীরে ধীরে আসতে থাকে আরও ফলাফল।

পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদে মোট আসন রয়েছে ৩৩৬টি, এর মধ্যে ২৬৬ আসনে সরাসরি ভোট অনুষ্ঠিত হয়। আর সংরক্ষিত রয়েছে ৭০টি আসন। এর মধ্যে ৬০টি নারীদের জন্য এবং ১০টি অমুসলিমদের জন্য।

জয়ী প্রার্থীরা জাতীয় পরিষদের সদস্য হন। ফল ঘোষণার পর স্বতন্ত্রদের যেকোনো দলে যোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। নির্বাচনের পর জাতীয় পরিষদ ভোটের মাধ্যমে সংসদ নেতা নির্বাচন করা হয়, যিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হন। সরকার গঠনের জন্য একটি দলকে সংসদে স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখাতে হয়। ন্যূনতম ১৫৯ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হয়।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে পিটিআই চেয়ারম্যান গহর আলী খান দাবি করেন, তাদের দলের সমর্থিত প্রার্থীরা দেড় শতাধিক আসনে জয়ী হয়েছেন। এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি খাইবার পাখতুনখওয়া ও পাঞ্জাব প্রদেশেও সরকার গঠনের জন্য পিটিআইকে প্রস্তুতি নিতে বলেন তিনি।

যদিও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পিটিআইয়ের নেতাদের তরফ থেকে অভিযোগ আসতে থাকে। পিটিআই একাধিক বিবৃতিতে কারচুপির অভিযোগ তোলে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় জাল ভোটের কিছু ভিডিও প্রকাশ করে। নির্বাচনে পিটিআইয়ের সমর্থিত প্রার্থী বাসারত রাজা, ওমর আইয়ুব, মালিকা বোখারীসহ অনেকে তাদের আসনে ফল কারচুপির অভিযোগ তোলেন।

তারা সামরিক বাহিনীর দিকে ইঙ্গিত করে বলতে থাকেন, বিশেষ গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপে ফল পাল্টে দেওয়ার জন্য ভোট গণনায় ইচ্ছেকৃত ধীরগতি করা হচ্ছে।

ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খান অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার প্রায় দুই বছর পর পাকিস্তানে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। গত বছর দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে রয়েছেন ইমরান খান। তার দল প্রতীক ছাড়াই ভোটে রয়েছে। পিটিআইয়ের প্রার্থীরা লড়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।

ভোটে আরও রয়েছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি, যেটির নেতৃত্বে রয়েছেন বিলাওয়াল ভুট্টো ও আসিফ আলি জারদারি।

২৪১ মিলিয়ন লোকের বাস পাকিস্তানে। দেশটিতে ১৮ বছরের বেশি নাগরিক অর্থাৎ ভোটার সংখ্যা ১২৮ মিলিয়ন। চলতি বছর জাতীয় পরিষদে মোট পাঁচ হাজার ১২১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

প্রতিটি আসনে গড়ে ১৯ জন প্রার্থী হয়েছেন। মোট প্রার্থীর মধ্যে ৯৪ শতাংশ বা চার হাজার ৮০৬ জন পুরুষ প্রার্থী, আর নারী প্রার্থী ৩১২ জন। এই তালিকায় দুই ট্রান্সজেন্ডারও রয়েছেন।