গত প্রায় চার দিন ধরে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, মারামারি, আহত, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়াসহ নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে উত্তপ্ত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আজ (১৪ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত) একাডেমিক কার্যক্রম ও আবাসিক হলসমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হলো। একইসঙ্গে ছাত্রদের আজ বিকেল ৫টা এবং ছাত্রীদের আগামীকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ডীন, ইন্সটিটিউট পরিচালক, রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় প্রধান, প্রভোস্ট এবং ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের সমন্বয়ে এক জরুরি সভার ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এদিকে, ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করার পর অস্ত্র উদ্ধারে হলে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল আলম বলেন, অস্ত্র উদ্ধারে এখন হল তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও আছেন।

তিনি বলেন চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আজকে আমরা হল ভ্যাকেন্ট দিতে বাধ্য হয়েছি। এরপর যাতে ক্যাম্পাসে কেউ অস্ত্র নিয়ে বের না হতে পারে, সেজন্য আমরা প্রয়োজনীয় কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি।

এর আগে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের জের ধরে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চুয়েটে মঙ্গলবার ভোর ৫টা থেকেই সশস্ত্র অবস্থায় হলুদ হেলমেট পড়ে প্রায় ১৫-২০ জনের একটি দলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে অবস্থান করতে দেখা যায়। তারা সকাল ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চট্টগ্রাম শহরগামী শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ক্যাম্পাসে আনার উদ্দেশে রওনা দেওয়া সকল বাস আটকিয়ে তা পুনরায় গ্যারেজে ফেরত পাঠায়। এরপর তারা হাতে রামদা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বর এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, স্বাধীনতা চত্বরের আশপাশে কাউকে দেখলেই তার দিকে তেড়ে যাচ্ছিল ওই দলটি। এ কারণে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি বিভাগের কোনো শিক্ষার্থী ক্লাসে যেতে পারেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম এই দলটির পরিচয় নিশ্চিত করতে না পারলেও তিনি বলেন, প্রতিদিনের মতো শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম শহর থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীদের আনতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শহরের উদ্দেশে ৭টি বাস রওনা দেয়। কিন্তু হলুদ হেলমেট পড়া একটি দল স্বাধীনতা চত্বরে বাসগুলোকে আটকে দেয়। এরা কারা আমার জানা ছিল না। তবে এরা ড. কুদরত-ই-খুদা হলের দিক থেকে এসেছে বলে আমি জানতে পেরেছিলাম।

এর আগে গত শনিবার শহরে বাস থামানোকে কেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দুই দল নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজন সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এরা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসানের অনুসারী বলে পরিচিত।