নিউজিল্যান্ডের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে চরম হতাশায় কেটেছিল প্রথম দিন। তাই বাংলাদেশ দল থেকে দ্বিতীয় দিনে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা জানানো হয়েছিল। দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে সত্যিই সেটা করতে পেরেছে মুমিনুল হকরা। চমৎকার বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডকে মোটেও সুবিধা করতে দেয়নি বাংলাদেশ। লাঞ্চের আগে ৭৪ রান দিয়ে তুলে নিয়েছে কিউইদের ৪ উইকেট।

সোমবার চলছে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা। লাঞ্চ বিরতির আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ১১২.৪ ওভারে ৫ উইকেটে ৪২৩ রান। টম ল্যাথাম অপরাজিত ২১৫ রানে।

আগের দিন যেখানে গোটা দিনে ১ উইকেট পেয়েছিল বাংলাদেশ, সেখানে দ্বিতীয় দিনে প্রথম সেশনেই বাংলাদেশের প্রাপ্তি ৪ উইকেট। শরিফুল ইসলামের বলে ড্যারিল মিশেল আউট হওয়ার পরপরই লাঞ্চের বিরতি দেন দুই আম্পায়ার। নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভবন্দি হওয়ার আগে কিউই ব্যাটার করতে পেরেছেন মাত্র ৩ রান।

প্রথম দিনই উইকেট উদযাপনে মেতেছিলেন এবাদত হোসেন। যদিও রিভিউ দুর্ভাগ্যে সেই উদযাপন হতাশায় রূপ নেয়। অবশেষে দ্বিতীয় দিনে এসে সাফল্যের মুখ দেখলেন মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের নায়ক। আবারও জ্বলে উঠেছেন ডানহাতি পেসার। রস টেলরকে আউট করে স্বস্তি ফেরানোর পর তুলে নিয়েছেন হেনরি নিকোলসের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।

টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছেন টেলর। অভিজ্ঞ ব্যাটারের শেষের শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি। ২৮ রানে আউট হয়ে গেছেন তিনি। টেলরকে দিয়েই দ্বিতীয় টেস্টে উইকেটের খাতা ‍খুলেছেন এবাদত। তার বলে শরিফুল ইসলামের হাতে ক্যাচ দেন আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ‘নাম্বার ফোর’ ব্যাটার। ৩৯ বলের ইনিংসটি টেলর সাজান ৪ বাউন্ডারিতে।

নিজের দুই ওভার পরই আবার এবাদতের উইকেট উদযাপন। এবার তার শিকার নিকোলস। কিউই এই ব্যাটারকে রানের খাতা খুলতে দেননি। তার বল নিকোলসের ব্যাটে ছোঁয়া লেগে উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে গেলেও আম্পায়ার আউট দেননি। বাংলাদেশ নেয় রিভিউ। সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পক্ষে গেলে কিউইরা হারায় চতুর্থ উইকেট।

ডাবল সেঞ্চুরির পথ প্রথম দিনই করে রেখেছিলেন টম ল্যাথাম। সুযোগটা নষ্ট করেননি বাঁহাতি ওপেনার। দ্বিতীয় দিনের সকালেই টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন তিনি। ল্যাথামের দু্র্দান্ত ব্যাটিংয়ে রানের চাকা ছুটছে নিউজিল্যান্ডের।

ল্যাথামের এই ইনিংসে আছে কিছুটা ভাগ্যের ছোঁয়া। প্রথম দিন বেশ কয়েকবার বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। যার মধ্যে এক ওভারে দুইবার রিভিউ নিয়ে টিকে যাওয়ার ঘটনাও আছে। তবে সব মিলিয়ে দেখার মতো এক ইনিংস খেলেছেন তিনি। নজরকাড়া সব শটে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছেন। ২০১৮ সালে ওয়েলিংটনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন। আর এবার নিজের শহর ক্রাইস্টচার্চে পেলেন দ্বিতীয় দ্বিশতক। ৩০৫ বলে পৌঁছে যান মাইলফলকটিতে।

এর আগে ল্যাথামের সঙ্গে ৯৯ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করেছিলেন ডেভন কনওয়ে। প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন এই ব্যাটার। যদিও শতক পূরণের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। রান আউট হয়ে দিনের শুরুতেই তিনি ফিরলে উইকেট উদযাপনের উপলক্ষ দ্রুতই পায় বাংলাদেশ।

প্রথম দিন ভীষণ সংগ্রাম করতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। সারাদিনে পেয়েছিল মোটে ১ উইকেট। উইল ইয়ংয়ের আউট হওয়ার পর দিন পার করে দিয়েছিলেন ল্যাথাম-কনওয়ে। তবে দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই ভাঙলো তাদের ২১৫ রানের জুটি। মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত থ্রোতে বাংলাদেশ পেয়ে যায় দ্বিতীয় উইকেট।

কনওয়ের রান আউটের দায় এড়াতে পারবেন না ল্যাথাম। তার ভুল ডাকে সাড়া দিয়ে কনওয়ে রানের চেষ্টা করতে গেলে দ্রুত দৌড়ে কাভার থেকে চমৎকার থ্রোতে সরাসরি স্টাম্প ভেঙে দেন মিরাজ। ফল, রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরত কনওয়ে। যাওয়ার আগে অবশ্য দিনের প্রথম বলেই সেঞ্চুরি পূরণ করেছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুর্দান্ত সময় পার করা এই ব্যাটার করেছেন ১০৯ রান। ১৬৬ বলের ইনিংসটি কনওয়ে সাজান ১২ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায়।

ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের প্রথম দিনে দাপট দেখিয়ে বাংলাদেশকে রীতিমতো শাসন করেছে নিউজিল্যান্ড। প্রথম দিনের ১ উইকেটে ৩৪৯ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করে কিউইরা।

এখন সময়/শামুমো