গোলের পর নেইমারদের আনন্দনৃত্য। গতকাল দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে এমন উৎসব বারবারই করেছে ব্রাজিল। হার, দুশ্চিন্তা ও চোটের মধ্যেও একটি দল এভাবে ফিরতে পারে! ব্রাজিলই পারে। যেদিন তাদের পায়ে ছন্দ ফেরে সেদিন সবুজ ক্যানভাসে ফুটবল হয়ে উঠে শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি। মাঠে তৈরি হয় এক অপূর্ব মোহিনী মায়া। তখন সব অশুভকে বিদায় করে ব্রাজিল আবার হলুদের উৎসবে রং ছড়ায়।

প্রতিপক্ষের জালে তারা ট্রেনিং মাঠের মতো ‘গোল প্রাকটিস’ করে। তখন আর কিছু পাওয়ার থাকে না দক্ষিণ কোরিয়ার, তাদের ৪-১ গোলে উড়িয়ে সেলেসাওরা পৌঁছে গেছে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। সেখানে অপেক্ষা করছে গতবারের রানার্স-আপ ক্রোয়েশিয়া, যারা ট্রাইব্রেকারে ৩-১ গোলে জাপানকে হারিয়ে শেষ আটে জায়গা করে নিয়েছে।

আসলে নাইন-সেভেন্টিফোর স্টেডিয়ামকে গত রাতে ট্রেনিং মাঠ বানিয়ে ফেলেছিল পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা। ট্রেনিং মাঠে গোলের ভয় থাকে না। সেখানে ফুটবলাররা বল নিয়ে যেমন কারিকুরি দেখায় এবং নতুন কিছু করার চেষ্টা করে, ব্রাজিল সে রকম ফুটবলেরই প্রদর্শনী করেছে। অথচ আগের দিনের সংবাদ সম্মেলনে ও রকম বিশ্বাস দেখা যায়নি ব্রাজিলিয়ান কোচের চোখে-মুখে। নেইমারের প্রশ্নেও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি। চোট সেরে গতকাল ফিরেছেন দলের মহাতারকা। সঙ্গে ফিরেছে অ্যাটাকিং থার্ডে সাম্বার সৌন্দর্য ও ছন্দ। তাই শুরু থেকেই ভিনিসিয়ুস, রিচার্লিসন, রাফিনায়ার পায়ে খেলাটা মনোহরি হয়ে ওঠে। গোলের শুরু হয় ৭ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের পায়ে। ডানদিক থেকে রাফিনিয়ার বাড়ানো ক্রসটি তিনি ঠাণ্ডা মাথায় কোরিয়ার জালে প্লেসিং করে দলকে এগিয়ে নেন। চোট-জর্জর দলটির ফেরা দেখে কোরিয়াও হয়তো চমকে গেছে। তখন আক্রমণের ঝাঁঝ এত বেশি যে মিনিট তিনেক না যেতেই দ্বিতীয় গোলের ঘনঘটা। রিচার্লিসনকে ফাউল করে কোরিয়ান ডিফেন্ডার পেনাল্টির বিপদ ডেকে আনেন। ১৩ মিনিটে সেই পেনাল্টি গোলে শুরু হয় নেইমারের কাতার বিশ্বকাপ।

দুই গোলের লিডে পুরো দলে এমন আত্মবিশ্বাস ছড়িয়েছে, তখন সেলেসাও ফুটবল ফুটবলের রূপ মাধুরী চড়েছে সপ্তমে। ২৯ মিনিটে জন্ম হয় ম্যাচের সেরা মুহূর্ত। রিচার্লিসন বলটাকে মাথায় নিয়ন্ত্রণ করেন কয়েক সেকেন্ড। এরপর পায়ে নামিয়ে মার্কিনিয়সের কাছে ঠেলে তিনি ছোটেন বক্সে। থিয়াগোর সিলভার ছোট টাচে খুলে যাওয়া গোলমুখে রিচার্লিসনের পায়ে রচিত হয় টুর্নামেন্টের অন্যতম সুন্দর গোলটি। বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় গোলের পর মিনিট সাতেক পর নেইমারের পায়ে শুরু হয় দ্রুত গতির এক প্রতি-আক্রমণ। সেটি ভিনিসিয়ুস এত সুন্দর সাজিয়ে দিয়েছিলেন, পাকেতার ভলিটিও হয়েছে দারুণ সুন্দর।

৪-০ গোলে প্রথমার্ধে লিড নেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে আর খেলার কিছু বাকি থাকে না। এর পরও খেলতে হয় এবং আরো কয়েকটি সুযোগ নষ্ট করে তারা। এমন একাধিপত্যের ম্যাচে দর্শক-সমর্থকরাও হয়তো মনে রাখবে না মিসগুলোর কথা। তবে পাইক সিয়ুন-হোর গোলটি অবশ্যই মনে থাকবে এলিসনের। বুলেটের শটে তিনি চমকে দিয়েছিলেন এই গোলরক্ষককে। ওটুকুই দক্ষিণ কোরিয়ার গর্ব। আর ব্রাজিল গ্রুপে যেটা পারেনি, সেটা করেছে ষোলোতে। দারুণ আক্রমণাত্মক ফুটবলে নিজেদের ফেভারিট তকমার যথার্থতা প্রমাণ করেছে।

তার আগে ক্রোয়েশিয়া-জাপানের ম্যাচে হয়েছিল তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলের সমতার পর টাইব্রেকারে জাপানের তিনটি শট ফিরিয়ে দিয়েছেন গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচ। তাতে ৩-১ গোলে টাইব্রেকার জিতে ক্রোয়েশিয়া উঠে কোয়ার্টার ফাইনালে।

রাকিব/এখন সময়