ভারতের পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষ করে রাজধানী কলকাতা ও তার আশেপাশে গত দুই মাসে অ্যাডিনো ভাইরাসের সংক্রমণে প্রায় একশো শিশু মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এর পরেই ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে কলকাতা শহরে। শিশু মৃত্যুর সংখ্যাও প্রতিদিন বেড়েই চলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাডিনো ভাইরাসও করোনার মতোই একটি ‘রেসপিরেটরি ভাইরাস’। অর্থাৎ এটি শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর উপসর্গগুলো অনেকটা কভিডের মতোই এবং এটিও অত্যন্ত সংক্রামক। অ্যাডিনো ভাইরাস নতুন ধরনের ভাইরাস নয় ঠিকই কিন্তু এ বছর ভাররাসটির প্রকোপ অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। কলকাতার সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসকরা এমনটাই বলছেন।

অ্যাডিনো ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে চার থেকে ছয়-সাত বছর বয়সী (প্রাক-স্কুল পর্যায়ের) শিশুরা, যাদের সার্বিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম। অনেক শিশুকে হাসপাতালে দিনের পর দিন ভেন্টিলেটরেও রাখতে হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য দাবি করছে, তারা অ্যাডিনো ভাইরাস প্রতিরোধে সব হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং পরিস্থিতি এখনও ততটা উদ্বেগজনক হয়ে ওঠেনি।

তবে কলকাতারই সুপরিচিত বি সি রায় শিশু হাসপাতালে গত রবিবার সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে সাতটি শিশু মারা যাওয়ার পর অ্যাডিনো ভাইরাস নিয়ে ভয় আরো দানা বেঁধেছে। তিন মাসের শিশুকে অ্যাডিনোতে হারানোর পর পরিবারের বিলাপ

কলকাতার সুপরিচিত শিশু চিকিৎসক দ্বৈপায়ন ঘটক বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, অ্যাডিনো ভাইরাস তাদের কাছে কোনো অচেনা ভাইরাস নয় ঠিকই, কিন্তু এ বছর যে কোনও কারণেই হোক অ্যাডিনোতে সংক্রমণের ঘটনা অনেক বেশি ঘটছে। তিনি বলেন, ‘এর উপসর্গগুলো শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি-জ্বর বা ফ্লু-র মতোই। অর্থাৎ অন্য যে কোনো রেসপিরেটরি ভাইরাসের চেয়ে আলাদা কিছু নয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘তবে অনেক ক্ষেত্রে মাল্টিসিস্টেম ইনভলভমেন্ট হয়ে পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা, গায়ে-হাত-পায়ে খুব ব্যথা কিংবা চোখে কনজাংটিভাইটিস হওয়ার মতো ঘটনাও আমরা দেখতে পাচ্ছি।’একই গোত্রের ভাইরাস কোভিড-১৯ সাম্প্রতিককালে যে ভয়ে সৃষ্টি করেছিল, অ্যাডিনো ভাইরাস ততটা প্রাণঘাতী বা বিধ্বংসী হবে না বলেই কলকাতার বেশির ভাগ চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ এখনও আশাবাদী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা ঠিক যে অনেক শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকারই হচ্ছে না। কিন্তু যাদের হচ্ছে, তাদের কারো কারো ক্ষেত্রে এটা বেশ খারাপ মোড় নিচ্ছে। অনেকেই আবার খুব লম্বা সময় ধরে আক্রান্ত হচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গের স্কুলগুলোতে এখন পরীক্ষা চলছে। এই সময় শিশুর জ্বর হলেও বাবা-মা তাদের স্কুল বাদ দিতে চান না। অনেক সময় প্যারাসিটামল খাইয়ে জোর করে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠিয়ে দেন। এতে করেই অ্যাডিনো ভাইরাসের বিস্তার হুট করে আরো বেড়ে গেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

তবে অ্যাডিনো ভাইরাসে শুধু যে শিশুরাই আক্রান্ত হচ্ছেন এমনটা নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনো বয়সের মানুষের হতে পারে। কিন্তু ঠিক কভিডের মতোই এখানেও শিশু ও বয়স্কদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ভয়ের বিষয় হলো, এই ভাইরাস মোকাবিলার জন্য বাজারে কোনো টিকা নেই।

রাকিব/এখন সময়