প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘করোনা মহামারিতে অর্থনীতির ওপর বিরাট চাপ সৃষ্টি হয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। তার সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শুধু আমাদের দেশ না, সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে মন্দা দেখা গেছে। আমাদের এখান থেকে মুক্ত হতে হবে। আমাদের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। যত অনাবাদি জমি আছে, সব আবাদ করতে হবে। আমি মনে করি, আমাদের আনসার বাহিনী, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন। গ্রামের লোকজনকে শেখানো, তাদের দিয়ে কাজ করানো, ফসল উৎপাদন করা ও সেগুলো সংরক্ষণ করার বিষয়ে আপনারা অবদান রাখতে পারেন।’

রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৩তম জাতীয় সমাবেশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি চাই আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক। এই দেশ আর পেছনে ফিরে যাবে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমরা তথ্য-প্রযুক্তিতে যে পদক্ষেপ নিয়েছি তাতে এই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আজকে শতভাগ বিদুৎ দিতে পেরেছি, আমরা স্যাটেলাইট-১ চালু করেছি। মেট্রোরেল চালু হয়েছে, পাতাল রেল চালু হবে; কর্ণফুলি নদীতে ট্যানেল করে দিচ্ছি, পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে করে দিয়েছি। আর এসব প্রতিটি স্থাপনায় আনসার বাহিনী বিশেষভাবে জড়িত ছিল।আমাদের সবার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ একটি উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হয়ে উঠবে।

আনসার সদস্যদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, আজকে যারা পুরস্কার, মেডেল পেয়েছেন; তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি চাই, এভাবেই আপনাদের কাজের স্বীকৃতি দিক, যাতে উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। আজকে চমৎকার কুচকাওয়াজ উপহার দিয়েছেন আপনারা। আনসার একাডেমির কোরিওগ্রাফি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অত্যন্ত চমৎকার হয়। আপনারা ডিসপ্লে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেন। এক্ষেত্রে আনসার বাহিনী সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এই বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকর্তাকে বিভিন্ন গ্রেডে উন্নীত করা এবং বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।নতুন ব্যাটেলিয়ান দল গঠন করে দিয়েছি। বেতন বৃদ্ধি ও অবকাঠামো উন্নয়নের পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করেছি। ইউনিয়ন ব্যাটালিয়নদের মাসিক সম্মানি ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। সাধারণ আনসার সদস্যদের ভাতা বৃদ্ধি ও নতুন রেসন সামগ্রী সংযোজন করা হয়েছে। হিল আনসারদের স্থায়ীকরণের কার্যক্রমও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আধুনিক সুবিধার ২৭টি উপজেলায় দৃষ্টিনন্দন অফিস ভবন নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৯টির কাজ শেষ হয়েছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের আনসার বাহিনী যেন চলতে পারে, সেদিকে খেয়াল রেখে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।

এর আগে, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছান। জাতীয় সমাবেশ উপলক্ষে বাহিনীর কর্মকর্তা, ব্যাটালিয়ন আনসার, সাধারণ আনসার, ভিডিপি-টিডিপি সদস্যদের সমন্বয়ে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সালাম গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এসময় উপস্থিত ছিলেন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক এবং বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমির ভারপ্রাপ্ত কমান্ড্যান্ট মো. ফখরুল আলম।

কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের অসীম সাহসিকতা, বীরত্বপূর্ণ কাজের পাশাপাশি বুদ্ধিমত্তা, একনিষ্ঠতা, সততা, দূরদর্শিতা, মমত্ববোধ প্রভৃতির দৃষ্টান্তপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মোট ৮টি ক্যাটাগরিতে ১৮০ জনকে সাহসিকতা ও সেবা পদক পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাকিব/এখন সময়