শুক্রবার পর্যন্ত পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা যাবে না, এমনটাই জানিয়েছে লাহোর হাইকোর্ট। বিচারক জেবা চৌধুরি এবং ইসলামাবাদ পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সংক্রান্ত মামলাতে এখন স্বস্তিতে ইমরান খান। ইসলামাবাদের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত জানিয়েছে, ইমরানের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ২০ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত রাখা হল। তবে তোশাখানা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় স্থগিতাদেশের জন্য ইমরানের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে ইসলামাবাদের নিম্ন আদালত।

লাহোর হাইকোর্টের নয়া নির্দেশ সামনে আসার পরে আজ সন্ধ্যায় টুইটারে ইমরানের একাধিক ভিডিও বার্তা সামনে আসে। সেখানে ফের নিজেকে নির্দোষ দাবি করে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান বলেন, “কখনও আইন ভাঙিনি। আজ লিখে দিচ্ছি, ৮৫টি মামলা রয়েছে আমার বিরুদ্ধে। একটাও প্রমাণ করে দেখাক। কারো আসার প্রয়োজন নেই, একটি মামলাও প্রমাণ হলে আমিই রাজনীতি ছেড়ে দেব।”

তাকে গ্রেপ্তারের জন্য রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন ইমরান। তাঁর কথায়, “পাকিস্তানে এক জনকে গ্রেপ্তারের জন্য কোনো বাহিনীর এ ধরনের মরিয়া প্রচেষ্টা আগে কখনও দেখা যায়নি। মনে হচ্ছে, আমি দেশের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসবাদী। গোটা দেশ আমাকে ৫০ বছর ধরে চেনে। পুলিশ ও রেঞ্জার্স পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধানকে গ্রেফতার করতে পৌঁছে যাচ্ছে! কী আমার অপরাধ?” এর পরেই নওয়াজ শরিফের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ইমরান বলেন, “লন্ডনে বসেও উনি ভয় পেয়ে গিয়েছেন। তার পরিকল্পনা হল, ‘প্রথমে ইমরানকে জেলে ঢোকাও তার পরে আমি আসব।’ ওকে বলছি, আমাকে জেলে পুরলে এমন পরিস্থিতি হবে যে, আপনার হাল খারাপ হয়ে যাবে।” তার লড়াই দেশ ও আগামী প্রজন্মের জন্য বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। আজ ফের তিনি দাবি করেছেন, পুলিশ হেফাজতে তাকে মেরে ফেলার চক্রান্ত হচ্ছে।

এদিকে লাহোর হাইকোর্টের নতুন নির্দেশ আসার আগে ফের পুলিশি অভিযানের আঁচ করে ইমরানের বাড়ির চারপাশ ‘শিপিং কন্টেনার’ দিয়ে ঘিরে ফেলেন তার সমর্থকেরা। তৈরি করা হয় দুর্ভেদ্য বলয়। দুপুর ১২টা নাগাদ ইমরানের জয়ধ্বনি দিতে দিতে লাঠি-রড নিয়ে ফের ইমরানের বাড়ির সামনে জটলা করেন পিটিআই সমর্থকেরা। পাক পঞ্জাব প্রদেশের মন্ত্রী আমির মিরের অভিযোগ, ইমরানের সমর্থকদের মধ্যে মিশে গিয়েছিল জঙ্গিরা। যদিও ইমরান ঘনিষ্ঠশফকত মেহমুদ একে মিথ্যা প্রচার বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, তোশাখানা মামলায় আদালতের নির্দেশে ইমরানকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ সক্রিয় হতেই প্রবল প্রতিরোধ আসে ইমরানের অনুগামীদের পক্ষ থেকে। মঙ্গল ও বুধবার ইসলামাবাদ পুলিশ, পাঞ্জাব পুলিশ এবং রেঞ্জারদের যৌথ বাহিনী ইমরানের লাহোরের জামান পার্কের বাড়ি ঘিরে ফেলে। দু’পক্ষের তীব্র সংঘাত বাধে। এরপরেই দেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে মিনার-এ-পাকিস্তানের চারপাশে পিটিআই সমর্থকদের মিছিলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে লাহোর হাইকোর্ট। এর পাশাপাশি বিচারপতি সালিম শেখ জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে বিশ্বের দরবারে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি ধাক্কা খাচ্ছে।

রাকিব/এখন সময়