ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলছেন বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে তা সত্য নয়।

দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেছেন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ও স্কলারদের ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার কর্মসূচি চলমান আছে এবং এবিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, শিক্ষার্থী ও পণ্ডিতদের বৃত্তি নিয়ে বাংলাদেশে আসার কর্মসূচি কয়েক বছর ধরে বন্ধ আছে। সেটিই ফুলব্রাইট কর্মসূচির ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।

“ঢাকায় হোলি আর্টিজানের (হামলার) ঘটনার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, শিক্ষার্থী ও স্কলারদের এই বৃত্তিতে বাংলাদেশে আসা বন্ধ আছে। এটি নতুন কোন ঘোষণা নয়,” বলছিলেন দূতাবাসের ওই মুখপাত্র।

মার্কিন দূতাবাসের নিয়মানুযায়ী তার নাম প্রকাশ করেননি ওই কর্মকর্তা।

এর আগে বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যম তাদের অনলাইন ভার্সনে বাংলাদেশীদের জন্য ফুলব্রাইট স্কলারশিপের ‘সুযোগ বন্ধের’ সংবাদ প্রকাশ করে।

আবার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে ফুলব্রাইট স্কলারশিপের ওয়েবসাইটের কথা উল্লেখ করে স্কলারশিপটি বাংলাদেশীদের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে প্রচার করেছিল।

ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে এই গুজব রটানো হয় এমন সময়, যখন পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার খবর নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।

শুক্রবার মার্কিন অর্থ দফতরের ‘ফরেন অ্যাসেটস কনট্রোল অফিস’ (ওএফএসি) বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান ও ১৫ জন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে – যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নিপীড়নের সাথে সংশ্লিষ্ট বলে নিষেধাজ্ঞায় উল্লেখ করা হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের মধ্যে র‍্যাব এবং এর সাবেক ডিজি হিসেবে বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ ও র‍্যাবের বর্তমান ডিজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন।

এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যেই ফুলব্রাইট স্কলারশিপের সুযোগ বন্ধ সংক্রান্ত গুজব ছড়িয়ে পড়ায় ফুলব্রাইট স্কলারশিপের চলমান কর্মসূচির আবেদনকারীসহ অনেকের মধ্যেই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।

রিফাত ফাতিমা নামে একজন আবেদনকারী বলেছেন ফেসবুকে স্কলারশিপের সুযোগ বন্ধের খবর দেখে তিনি বিস্মিত ও হতাশ হয়েছিলেন।

“আমি আবেদন করেছি। খবরটি দেখে খুব খারাপ লাগছিলো। পরে ভালো করে দেখে বুঝেছিলাম যে পুরোটাই ছিলো ফেক নিউজ,” বলছিলেন তিনি।

দূতাবাস জানিয়েছে বাংলাদেশীদের এ স্কলারশিপে আবেদনের শেষ তারিখ এগারই ডিসেম্বর ছিলো। তবে এটি এখন ২১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য মর্যাদাপূর্ণ একটি বৃত্তি হলো এই ‘ফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম’। নানা বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ বৃত্তির জন্য নির্বাচিতদের যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের ফি থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়া-যাতায়াতসহ প্রয়োজনীয় সব খরচ দেয়া হয়।

এখন ২০২২-২৩ সেশনের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে এবং এবছরও বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা ফুলব্রাইট স্কলারশিপের আওতায় মাস্টার্স করার জন্যে আবেদন করতে পারবে।

সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক কিংবা গবেষণার সাথে জড়িত মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তারা বৃত্তিটির জন্য অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন।

এতে আবেদন করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভালো ফলের পাশাপাশি কিছুটা কাজের অভিজ্ঞতাও থাকতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের এই ফুলব্রাইট নিয়ে দুটি স্কিম চালু আছে। একটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য আর অন্যটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন এমন প্রার্থীদের জন্য।

দ্বিতীয় স্কিমের আওতায় প্রতিবছরই বাংলাদেশ থেকে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ও গবেষকরা।

তবে ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজানের হামলার ঘটনার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের বাংলাদেশে আসা বন্ধ রয়েছে।

এবারেও ফুলব্রাইটের ঘোষণায় সেটি বহাল রাখা হয়েছে।

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ফেসবুক পাতায় গত ১২ই ডিসেম্বর একটি পোস্ট দিয়ে আবেদনের সুযোগটি আবারো মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে – “আপনি কি উন্নত ডিগ্রি বা সমমানের পেশাদার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন স্কলারদের একজন যিনি আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা পরিচালনা ও তাদের বিশেষত্ব শেখাতে প্রস্তুত? ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস আনন্দের সাথে ২০২২ সালের ফুলব্রাইট ভিজিটিং স্কলার প্রোগ্রাম’র আওতায় ছয় থেকে নয় মাস মেয়াদী গবেষণা অনুদান যা ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হবে তা প্রদানের ঘোষণা দিচ্ছে। এখনই আবেদন করুন” !

মঙ্গলবার দুপুরেও সেটি আবার পোস্ট করা হয়েছে দূতাবাসে ফেসবুক পেজে। -বিবিসি

এখন সময়/শামুমো