কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের এক সপ্তাহের মধ্যেই ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে সৌদি আরব। ইরান জানিয়েছে, বাদশাহ সালমানের পাঠানো এক চিঠিতে এ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে এ তথ্য এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।

বহুদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই দেশের মধ্যে চরম বৈরিতা চলছিল। তবে গত সপ্তাহে চীনের মধ্যস্থতায় দুই দেশ আবার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে একটি সমঝোতা করেছে। দুই দেশের এই সম্পর্ক ওই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক চিত্র বদলে দিতে পারে বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।

ইরানি প্রেসিডেন্টকে সৌদি আরবে সফরের জন্য এই আমন্ত্রণের কথা একটি টুইট করে জানিয়েছেন ইরানের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামশিদি। তিনি আরো লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট রাইসি এই আমন্ত্রণকে ‘স্বাগত’ এবং ‘সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি করার জন্য ইরান প্রস্তুত রয়েছে।’ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিন পৃথক এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছেন, দুই দেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে একটি বৈঠক করার বিষয়ে একমত হয়েছে। এজন্য তিনটি সম্ভাব্য স্থানের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে সম্ভাব্য স্থান বা কবে নাগাদ ওই বৈঠক হতে পারে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সম্পাদক সেবাস্তিয়ান উশার বলছেন, চীনের মধ্যস্থতায় কয়েকদিন ধরে আলোচনার পর অনেকটা অপ্রত্যাশিত দুই দেশের সম্পর্কের সাম্প্রতিক উন্নয়ন বড় ধরনের একটি পালাবদল তৈরি করছে বলে মনে করা হচ্ছে। দুই দেশই ঘোষণা করেছে যে, তারা আগামী দুই মাসের মধ্যে দূতাবাস খুলবে এবং বাণিজ্য ও নিরাপত্তার সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। ইরান ও সৌদি আরবের সম্পর্কের এই উন্নতিকে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘসহ অনেকেই সতর্কতার সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছে। এর আগে তাদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়েছিল।

সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সৌদি আরবে অভিযুক্ত প্রধান সারির শিয়া মুসলিম ইমাম শেইখ নিমর আল-নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে তেহরানে ২০১৬ সালে সৌদি দূতাবাসে বিক্ষোভকারীরা হামলা করে ঢুকে পড়েছিল। সেই ঘটনার পরে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছিল সৌদি আরব। এরপর থেকেই সুন্নি ও শিয়া প্রধান দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে প্রায়ই চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারে দুই দেশে একে অপরকে হুমকি হিসাবে বিবেচনা করে আসছে। সিরিয়া এবং ইয়েমেনসহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক যুদ্ধে তারা পরস্পর বিরোধী পক্ষকে সমর্থন দিয়েছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিন আরো বলেছেন, ইরান আশা করছে বাহরাইনের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক উন্নয়নেও পদক্ষেপ নেয়া হবে। সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ মিত্র বাহরাইন ২০১৬ সালের ওই ঘটনার পর তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল।

তিনি বলেছেন, ‘আমরা আশা করছি, ইরান ও বাহরাইনের সম্পর্কের মধ্যে থাকা কিছু বাধা অপসারণ করা হবে এবং আমরা পুনরায় দূতাবাস চালু করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারবো।’ বাহরাইন এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেনি। তবে এর আগে সৌদি আরব- ইরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিল। জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরব অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও তাদের সম্পর্কের উন্নতি হবে বলে ইরান আশা প্রকাশ করেছে।

রাকিব/ এখন সময়