ইউক্রেন নয়, রাশিয়াই গত মার্চে বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধিতে’ হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনের সংসদ সদস্য (এমপি) ইউলিয়া ক্লিমেনকো। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) এক আলোচনায় তিনি এ দাবি করেন।

দ্য কারলাইল গ্রুপের সহপ্রতিষ্ঠাতা ডেভিড এম রুবেনস্টেইনের সঞ্চালনায় ওই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আলোচক হিসেবে ইউক্রেনের ওই এমপি ছাড়াও ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহিরয়ার আলম, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান বিল কিটিং ও হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্টের ফিউচার ডিপ্লোমেসি প্রজেক্টের সিনিয়র ফেলো পলা জে. ডোব্রিনস্কি।

উল্লেখ্য, গত ২ মার্চ ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন জাহাজটির প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান।

গতকাল আলোচনার শুরুতে প্রশ্ন ছিল, ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও পশ্চিমারা ইউক্রেনকে যেভাবে সহযোগিতা করছে তা যথেষ্ট কি না। মার্কিন কংগ্রেসম্যান বিল কিটিং এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহিরয়ার আলম বলেছেন, যুদ্ধ থামাতে বিশেষ করে, জাতিসংঘের মতো বহুপক্ষীয় ফোরামের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে এখনো ঘাটতি আছে।

ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘে উত্থাপিত প্রস্তাবে বাংলাদেশ একবার পক্ষে ভোট দিলেও দুইবার ভোটদানে বিরত থেকে। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক এর কারণ জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়—এই পররাষ্ট্রনীতি থেকেই বাংলাদেশ এ অবস্থান নিয়েছে। তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধ বন্ধ হওয়া উচিত। এই যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে খাদ্যপণ্য সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে।

এ সময় সঞ্চালক ইউক্রেনের বন্দরে বাংলাদেশের জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধিতে’ হামলার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখনো জানে না ওই হামলা কে করেছে। জাহাজটি ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। কারণ সেখান থেকে সাগরপথে মাইন পেতে রাখা হয়েছে।

এ সময় ইউক্রেনের এমপি ইউলিয়া ক্লিমেনকো বলেন, ইউক্রেন ওই জাহাজে হামলা চালায়নি। হামলা হয়েছে মিসাইলের (ক্ষেপণাস্ত্র) মাধ্যমে। সেখানে ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র ছিল না।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে সঞ্চালক জানতে চান, বাংলাদেশের জনগণের কত শতাংশ ইউক্রেনকে আর কত শতাংশ রাশিয়াকে সমর্থন করে। প্রতিমন্ত্রী জবাব দেন, এটি বলা কঠিন।

ইউক্রেনের এমপি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট খাদ্যসংকটে যদি বাংলাদেশিরা মারা যায়, তবে কি তারা এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন করবে। জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশিরা না খেয়ে মরবে না। হয়তো বেশি দামে খাদ্যপণ্য কিনতে হবে।