বাংলাদেশের অবস্থান সব সময় নির্যাতিতদের পক্ষে জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। কারণ যুদ্ধের সেই ভয়াবহতা আমরা নিজেরাও দেখেছি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী যেভাবে আমাদের ওপর অত্যাচার করেছে। আমরা সব সময় নির্যাতিত মানুষের পাশে আছি, তাই তো আমরা প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে যখন মানুষের প্রতি অত্যাচার হলো; শিশুরা আহত অবস্থায় আশ্রয় চাইল, আমরা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আজকে গাজায় শিশুদের যে অবস্থা দেখি, নারীদের যে অবস্থা দেখি, আমি জানি না বিশ্ব বিবেক কেন নাড়া দেয় না। সেটাই আমার প্রশ্ন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আজকে বিশ্বব্যাপী আমরা দেখি অনেকে শিশু অধিকারের কথা বলে, শিশুশিক্ষার কথা বলে, মানবাধিকারের কথা বলে সোচ্চার। আর পাশাপাশি আমার দেখি একটি দ্বিমুখী কার্যক্রম। গাজায় শিশুদের ওপর যখন বোমা ফেলা হয়, হত্যা করা হয়, হাসপাতালে বোমা ফেলা হয়; ফিলিস্তিনিদের ওপর যখন আক্রমণ করা হয়, তখন আমি জানি না এই মানবাধিকার সংস্থাগুলো কোথায় থাকে। তাদের সেই মানবিকতাবোধটা কোথায় থাকে সেটাই আমার প্রশ্ন।

রোববার (১৭ মার্চ) দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪ জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে অনুষ্ঠিত শিশু সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

আজকের শিশুরা আগামী দিনের উন্নত বাংলা গড়ার কারিগর মনে করে শিশুদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, পড়াশোনার নামে চাপ নয়, মেধা-মননের বিকাশই গুরুত্বপূর্ণ। যে কাজ তুমি করবে তার প্রতি তোমার আন্তরিকতা এবং সব সময় সততার সাথে করতে হবে। সততা এবং আন্তরিকতা যদি থাকে তাহলে সব সময় যে কোনো কাজেই সাফল্য অর্জন করা যেতে পারে। বঙ্গবন্ধু শিশুদের শিক্ষাকে সম্পূর্ণ অবৈতনিক করে দিয়েছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে প্রায় ২৬ হাজার স্কুল সরকারীকরণ করে দেন। বিধ্বস্ত দেশে সাংবাদিক, শিক্ষক সকলের চাকরি সরকারিকরণ করে দেন। সকল কারখানা জাতীয়করণ করে শ্রমিকদের চাকরিও নিশ্চিত করেছিলেন। তবে শিশুদের দিকে তার সব সময় নজর ছিল এবং দুস্থ শিশু, একেবারে দরিদ্র শিশু, অসহায়, এতিম তাদের পুনর্বাসনের জন্য শিশু ডে কেয়ার অ্যান্ড প্রটেকশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

অভিভাবক, শিক্ষক ও সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, মেধা-মননের সুযোগ যাতে শিশুরা পায়, পড়াশোনার নামে চাপ তৈরি করবেন না। সেভাবেই আমরা কারিকুলাম করছি। শিশুরা যাতে সুন্দর পরিবেশে মানুষ হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখছি। শিশুদের ঝরে পড়ার হার কমিয়ে এনেছি। আগামী দিনে স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার মূল নেতৃত্ব দেবে আজকের শিশু-কিশোররা। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে আমরা শিশুদের গড়ে তুলছি। আজকের শিশুরা গড়ে উঠবে স্মার্ট নাগরিক হিসেবে, এটাই আমাদের অঙ্গীকার। শিশুদের ছোটবেলা থেকে কতগুলো শিক্ষা দিতে হবে। যেটা একান্তভাবে শিশুদের জন্য অপরিহার্য। সেটা হলো শিশুদের রাস্তায় চলতে গেলে কতগুলো নিয়ম মেনে চলতে হয়, এই নিয়মটা যেন শিশুরা মেনে চলে সেই শিক্ষা শিশুদের দেওয়া প্রয়োজন। যাতে করে সড়ক দুর্ঘটনা না হয়। সেই সাথে রাস্তায় নিরাপদ চলতে গেলে কীভাবে আমোদের চলতে হবে, কোন দিকে হাঁটতে হবে এই বিষয়টাও ছোটবেলা থেকে শিশুদের শিক্ষা দেওয়া উচিত। যেসব শিশুরা প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক এসব শিশুদের সাথে কেউ যাতে দুর্ব্যবহার না করে, তাদের যেন আপন করে নেয়, সেভাবে শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে।

শিশু সমাবেশে শিশুদের পেছনে দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা শিশুদের অনুষ্ঠান, আমি দেখি আমার সামনে বেশ বয়োবৃদ্ধ শিশুরা বসে আছে। এখন মনে হচ্ছে আমি কার সামনে বক্তব্য দিচ্ছি। আমরা শিশুরা কোথায়, শিশুরা তো সেই দূরে, পেছনে, কেন তারা পিছনে থাকবে। আমার অনুরোধ থাকবে এরপর থেকে যখন কোন শিশুদের অনুষ্ঠান থাকবে অন্তত সামনের সারিগুলো আমাদের শিশুদের জন্য থাকবে, আর একটা পাশ শিশুদের জন্য থাকবে। আমার একটা সুবিধা আছে, আমার অনেক বয়স হয়ে গেছে, সামনে যারা তাদের আমি শিশু ভাবতেই পারি। সেটা ভাবার আমার অধিকার আছে। আমি সেটা মেনে নিয়েই বক্তব্য দিচ্ছি, কী করবো শিশুদের তো দেখতে পারছি না। ছোট্ট সোনামনিরা তোমরা অনেক দূরে থাকলেও আমরা হৃদয়ের কাছে আছ।