বিশ্বব্যাপী ১১৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এটি একটি রেকর্ড সংখ্যা, যা ‘সংঘাত সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার’ কথা বলে, জাতিসংঘ বলেছে।

১৯৭৫ সালে পরিসংখ্যান রাখা ও ডেটা নিবন্ধন শুরু করার পর থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর রেকর্ড করা বাস্তুচ্যুত মানুষের এই সংখ্যাটিই সর্বোচ্চ।

বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

ইউএনএইচসিআর বুধবার জানিয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ, নিপীড়ন, সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা সেপ্টেম্বরের শেষে ১১৪ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাস্তুচ্যুত মানুষের এই সংখ্যা গত বছরের শেষের তুলনায় ৫৬ লাখ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে বাস্তুচ্যুতির প্রধান কারণগুলো ছিল- ইউক্রেন, সুদান, মিয়ানমার ও ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে সংঘাত, আফগানিস্তানে মানবিক বিপর্যয় এবং সোমালিয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অস্থিতিশীলতা।

২০২৩ সালের মাঝামাঝি যারা নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন তাদের মধ্যে ১১ মিলিয়ন ইউক্রেনীয় রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছেন এবং ৩ মিলিয়ন সুদানি নাগরিক আধাসামরিক র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর সংঘাতে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন।

ক্রমবর্ধমান এই বাস্তুচ্যুতির সংখ্যার সঙ্গে ফিলিস্তিনিও সংখ্যাও নতুন করে যোগ হয়েছে। কেবল ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসেই, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সর্বাত্মক বোমা হামলার ঘটনায় ১.৪ মিলিয়ন ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় অনেক এলাকা ইসরায়েলি বিমানের অবিরাম হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বাস্তুচ্যুত মানুষের দুর্দশার সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সংকট সমাধানের জন্য নতুন করে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

গ্র্যান্ডি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা গাজা, সুদান এবং তার বাইরের ঘটনাগুলো যখন দেখছি, তখন শরণার্থী এবং অন্যান্য বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য শান্তি ও সমাধানের সম্ভাবনা বেশ দূরের মনে হতে পারে। কিন্তু আমরা হাল ছেড়ে দিতে পারি না। অংশীদারদের সাথে নিয়ে শরণার্থীদের সমস্যা সমাধানে পথ খুঁজে বের করার জন্য আমরা চাপ দিতে থাকব।’

ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লোকই আফগানিস্তান, সিরিয়া এবং ইউক্রেনের। বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যার দিক থেকে সিরিয়ার অবস্থান বরাবরের মতো শীর্ষে রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটির ৬৫ লাখ মানুষ বিশ্বের ১৩০টি দেশে ছড়িয়ে রয়েছে এবং দেশটিতে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আরও ৬৭ লাখ। যা অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় ‍বৃহত্তম।

কলম্বিয়ায় সামরিক, সশস্ত্র গোষ্ঠী ও আধা সামরিক বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতের কারণে সেখানে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, যার সংখ্যা ৬৯ লাখ।