বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘উন্নত চিকিৎসা বঞ্চিত দেশনেত্রীর (খালেদা জিয়া) শোচনীয় দুরাবস্থার জন্য একমাত্র দায়ী শেখ হাসিনা। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ ও স্থায়ী জামিনের বিষয়ে খ্যাতিমান চিকিৎসক ও আইনজীবীদের মতামতকে নিরেট অজ্ঞতাবশত নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিহিংসা মেটাতে অগ্রাহ্য করছেন প্রধানমন্ত্রী। উন্নত চিকিৎসা থেকে দেশনেত্রীকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকে পৃথিবী থেকে সরানো।’

আজ সোমবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন-চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপু, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

রিজভী বলেন, ‘২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি একটি মিথ্যা মামলার ফরমায়েশি রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর দৃশ্য দেশবাসী সবাই ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার মাধ্যমে অবলোকন করেছে। দেশনেত্রী হেঁটেই কারাফটক পার হয়েছেন। তাহলে সোয়া দুই বছরে তিনি কেন এত গুরুতর অসুস্থ হলেন?’

বিএনপি এই নেতা বলেন, ‘স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাজনীতির নামে বিরোধী নেতাকে হত্যার নানা দৃষ্টান্ত আছে দুনিয়াজুড়ে। রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেকসাই নাভালিননের চায়ের মধ্যে বিষ মেশানো হয়, বিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিশ্চিত যে অসুস্থ ইয়াসির আরাফাতের মধ্যে বিষাক্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ পলেনিয়ামের অস্তিত্ব শনাক্ত করেছেন। এটাই তার মৃত্যুর কারণ।চীনে চীন বংশের সম্রাট হুন কুয়াংশু ক্ষমতাচ্যুৎ হলে গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় বিষ খাইয়ে তাকে মারা হয়েছে। একজন মোঘল সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সহচর অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা করতে দেওয়া হয়নি ফরাসি চিকিৎসককে। কারণ, পরবর্তী সময়ে মোঘল সম্রাটের বিরাগভাজন ছিলেন তিনি। সারাবিশ্বে এহেন দৃষ্টান্ত ভুরিভুরি। কতৃর্ত্ববাদী নাৎসী একদলীয় শাসনব্যবস্থায় বিরোধী নেতাদের কারাগারে বিষ প্রয়োগে হত্যার অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কারাগারে যাওয়ার পরে বেগম খালেদা জিয়ার যকৃতের রোগ (লিভার সিরোসিস) দেখা দিয়েছে। যে রোগের কারণে তার পোর্টাল হাইপারটেনশন, পেটে ও ফুসফুসে পানি আসা, অন্ত্রের রক্তরক্ষণ হচ্ছে-যার চিকিৎসা এদেশে আর সম্ভব নয় বলে মেডিকেল বোর্ড ইতিমধ্যে পরামর্শ দিয়েছেন।’

‘এ ছাড়া রক্তে শর্করা’র পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে নেই। তার হৃদযন্ত্রের অবস্থাও ভয়ানক অবনতির দিকে। ইতিমধ্যেই তার হৃদপিণ্ডে একটি রিং বসানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি কিডনি রোগের জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে সবমিলিয়ে দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থা জটিল আকার ধারণ করেছে। বারবার তাকে সিসিইউতে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে’, যোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।

রিজভী বলেন, ‘দেশবাসী জানে একজন ব্যক্তির জীবন-মরণের বেদনার্ত করুণ সন্ধিক্ষণের কাহিনী। এই ব্যক্তিটি বিপুল জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। যিনি জীবনে কখনোই নির্বাচনে পরাজিত হননি, তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে আপসহীন সংগ্রামে। এই ব্যক্তির নিরন্তর সংগ্রাম ছিল অবরুদ্ধ গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের। তিনি স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে নির্ভিক যোদ্ধার মতন তেজোদীপ্ত। তার আহ্বানে ছাত্র-যুবক-নারী পুরুষ নির্বিশেষে জনতা বুক চিতিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করতো না।’

‘দেশবাসীর শুভেচ্ছা, ভালবাসায় সমাদৃত বেগম খালেদা জিয়া। তিনি আজ স্বৈরশাহীর নিষ্ঠুর আচরণে জীবন-মৃত্যুর টানাপোড়েনে বিপর্যস্ত’, বলেন বিএনপির এই নেতা।