ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে পুলিশের গুলিতে ১৭ বছরের এক আলজেরিয়-বংশোদ্ভূত তরুণ নিহত হওয়ার ঘটনায় উত্তাল দেশটি। টানা পঞ্চম রাতের মতো চলছে বিক্ষোভ। সহিংসতা দমাতে গত শুক্রবার ৪৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আজ রোববার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্সেই শহরে পুলিশ ও দাঙ্গাকারীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।

ভিডিও ফুটেছে দেখা গেছে, বিক্ষোভ দমাতে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরটিতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছে, সেখানে গতকাল ৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর আগে গত রাতেই এক হাজার ৩১১ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে দেশটির পুলিশ। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সহিংসতায় আহত হয়েছে ২৫০ জন পুলিশ।

বিবিসি জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় প্যারিসে ভারী পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে। পুলিশের গুলিতে নিহত নাহেম এমের দাফনে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম হয়েছে।

দেশটির সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বিক্ষোভে ৪৯২ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ২ হাজার গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং দেশব্যাপী তিন হাজার ৮৮০টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

গত মঙ্গলবার প্যারিসের পশ্চিমদিকে নান্তেরে এলাকায় নাহেল এম নামের ওই তরুণ গাড়ি চালিয়ে যাবার সময় ট্রাফিক পুলিশ তাকে থামতে বলে। সে না থামলে পুলিশ খুব কাছে থেকে তাকে গুলি করে।

ইতিমধ্যে এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো। তিনি একে ক্ষমার অযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, একজন পুলিশ অফিসার একটি গাড়ির চালকের দিকে বন্দুক তাক করে আছে। এরপর একটি গুলির শব্দ শোনা যায় এবং তারপর গাড়িটি থেমে যায়।

বুকে গুলিবিদ্ধ নাহেলকে জরুরি চিকিৎসা দেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। গুলিবর্ষণকারী অফিসারটিকে হত্যার অভিযোগে আটক করা হয়েছে। হেফাজতে থাকা ওই পুলিশ নিহত কিশোরের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।

ফরাসি মিডিয়ায় বলা হচ্ছে, পুলিশ প্রথমে ইঙ্গিত দিয়েছিল যে তরুণটি তাদের দিকেই গাড়িটি চালিয়ে দিয়ে পুলিশদের আহত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে ধারণা হয় যে প্রকৃত ঘটনা ছিল ভিন্ন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাত থেকেই প্যারিস ও অন্য আরো কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ ও সহিংসতা শুরু হয়। এরপর টানা তিনদিন চলছে সহিংস বিক্ষোভ। এতে গাড়ি ও বাসস্টপে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে, ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে কিছু রাস্তায়, আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ স্টেশনও। বিক্ষোভকারীদের হটাতে দাঙ্গা পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেছে।

নিহতের মা মুনিয়া সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘সে সকাল বেলাও বলছিল মা আমি তোমাকে ভালোবাসি, তার পর কাজে যায়, এর এক ঘণ্টা পর আমি একটা ফোন পাই- আমাকে বলা হয় আমার ছেলেকে গুলি করা হয়েছে।’

রয়টার্স বলছে, ২০১৭ সাল থেকে ট্রাফিক স্টপে পুলিশের গুলিতে যত জন নিহত হয়েছে তার বেশির ভাগই কৃষ্ণাঙ্গ বা আরব। এ বছর ফ্রান্সে ট্রাফিক স্টপে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর এটা দ্বিতীয় ঘটনা। গত বছর ফ্রান্সে এভাবে রেকর্ড সংখ্যক মোট ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।