জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ অভিযোগ করেছেন, দেশের ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে গেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি ও বিদেশে পাচার হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের যোগসাজশ ছাড়া এই টাকা কেউ বিদেশে নিতে পারে না বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

রোববার (১৮ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব অভিযোগ করেন তিনি।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, এই সরকার টানা ১৫ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায়। এই ১৫ বছরে দেশে সর্বত্র অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে এটা আমরা অস্বীকার করি না। অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। তার পরেও চলতি বাজেটে যে দুর্বল দিকগুলো আছে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে সেগুলো তুলে ধরা।

তিনি বলেন, এই বাজেটে সব চেয়ে দুর্বল দিকগুলো কি আমি বলে যাচ্ছি। ব্যাংক ঋণ, ব্যাংকগুলো সব দেউলিয়া হয়ে গেছে। তিন মাসে খেলাপিঋণ রয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। এ যাবত খেলাপিঋণ হয়েছে এক লাখ, ৩১ হাজার, ৬২০ কোটি টাকা। এটা অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট। এটা না এর ডাবল প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা ঋণখেলাপি হয়েছে। আইএমএফ বলেছে, তিন লাখ কোটি টাকারও বেশি হবে। হাইকোর্টে যে ঋণগুলো স্থগিত করে রেখে দেয়নি সেগুলো খেলাপিঋণ হয়ে গেছে। বিভিন্নভাবে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এই ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে গেছে।

কাজী ফিরোজ পত্রিকা তুলে ধরে ধরে বলেন, শীর্ষ ঋণখেলাপিরা চট্রগ্রামে। ৫৫টি কোম্পানি ৫০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এ ঋণ শোধ করার কোনো উপায় নেই। ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে আমেরিকায় পালালেন সাউথ বাংলা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন। পিকে হালদার ভারতে আছেন, উনি ৮০০ কোটি টাকা নিয়ে গেছেন। এটা তো আর উনি একা নেননি, এ টাকা নেওয়ার সঙ্গে আরও লোক জড়িত ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিয়ত প্রতিটি ব্যাংকের অডিট করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের যোগসাজশ ছাড়া এই টাকা কেউ বিদেশে নিতে পারে না। আর অন্যদিকে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে বিশ, ত্রিশজন ঋণখেলাপি।

জাপার এই নেতা বলেন, এতো কাজ হচ্ছে, “উই পোকারা খাচ্ছে সব উন্নয়ন।

ফিরোজ রশীদ আরও বলেন, করোনার চাপ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চাপ, আইএমএফের শর্তের চাপ, ব্যাংক খাতের লুটপাটের চাপ। বহুমুখী এতো চাপের মোকাবিলায় বাজেটের অগ্রযাত্রা মোটেও নিরাপদ হবে না বলে মনে করি। বাজেটে ব্যাংকখাত থেকে দেড় লাখ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এনবিআরকে অটোমেশন করলে আরও দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় হতো। ব্যাংক ঋণের দরকার হতো না।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, শুধু স্লোগান দিলেই স্মার্ট বাংলাদেশ হয়ে যাবে না। আমরা চুরিতে, চাঁদাবাজিতে, টাকা পাচারে স্মার্ট হয়েছি। আমরা এখন আর টাকায় ঘুস লেনদেন করি না। ঘুস ডলারে নিয়ে, বিদেশে নিয়ে স্মার্ট হয়েছি। রাস্তাঘাটে দেখি মুজিব কোট পরে বুকের সোনার নৌকা লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তাদের অন্তরে মুজিব আদর্শ কতটুকু আছে জানি না। রাজনীতি আজ চাটুকারদের দখলে চলে গেছে। যারা যত বেশি তেলমর্দন করে টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাঠায়, রাজনীতিতে তারাই ততোবেশি উন্নতি করে। রাজনীতি আজ আর রাজনীতি নাই।