ডিসেম্বরের মধ্যে স্থলসীমা চুক্তি চায় ভারত

আগামী ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস। ঢাকাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিস্তা ও স্থল সীমান্ত চুক্তির মধ্যে অন্ততঃ একটি চুক্তি এই তারিখের মধ্যেই চূড়ান্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে মোদী সরকার। এর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এ জন্য বিজেপির মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার কাজটিই জরুরি। বুধবার ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা এ খবর দিয়েছে।
এতে বলা হয়, সম্প্রতি দিল্লীতে বিজেপির জাতীয় পরিষদের এক সভায় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়েছে। ছিটমহল বিনিময়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিজেপির পশ্চিম বাংলা ও অসমের নেতৃত্বের সাথে আলোচনা করেছেন বিজেপির প্রবীণ নেতা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। মুলতঃ এই দুই রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বই বাংলাদেশের সঙ্গে প্রস্তাবিত চুক্তি দুটির বিরোধীতা করে চলেছে।
রাজনাথ সিংহ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, এই চুক্তির জন্য ভারত সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, কিছু আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা সরকারকে পালন করতে হয়। যেমন এই দুই চুক্তি। এ বিষয়ে আরও আলোচনার জন্য দুই রাজ্য নেতৃত্বকে ১৬ আগস্ট দিল্লীতে ডেকেছেন রাজনাথ ।
আনন্দবাজারের রিপোর্ট আরও বলা হয়, বিজেপির দুই বাজ্য শাখার পক্ষ থেকে স্থল সীমান্ত চুক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছিল ছিটমহল বিনিময় হলে ভারতকে অনেক বেশি জমি বাংলাদেশের হাতে তুলে দিতে হবে। বর্তমানে ১১১টি ভারতীয় ছিটমহল রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে ভারতীয় এলাকায়। এই চুক্তি হলে স্থানীয় মানুষের কাছে বিজেপির ভাবমুর্তি বিনষ্ট হবে বলে তাদের ধারণা। তবে সে সময় বিজেপি ছিল বিরোধী পক্ষে। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতে আসার পর বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বাংলাদেশ সফরকালে সুষমা শেখ হাসিনাকে বলেন, তিস্তা ও স্থল সীমান্ত চুক্তি নিয়ে আগের সরকারের প্রতিশ্রুতি দ্রুত রক্ষায় তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। এজন্য ঘরোয়া ক্ষেত্রে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা হবে বলেও তিনি জানান ।
রিপোর্টে বলা হয়েছে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন প্রশ্নে পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তি রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত দুই দেশের স্বার্থের সাথে সম্পৃক্ত। তাই মমতা ব্যানার্জির আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে দ্রুত কিছু করতে চায়না মোদী সরকার। সে কথা জানিয়ে সুষমা শেখ হাসিনাকে বলেছেন ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এগুবেন তারা ।
সেই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কাজটি এবার শুরু করে দিতে চায় নতুন সরকার । ঢাকা চায় চলতি বছরেই চুক্তি হোক। এ বছর হাসিনা ভারত সফরে আগ্রহী। মোদীও ঢাকা যেতে আগ্রহী। কূটনীতিকদের ধারণা চুক্তি নিয়ে অগ্রগতি না হলে সফরই বৃথা হয়ে যাবে।
স্থল সীমান্ত চুক্তির ফলে দেশের ভূখন্ডের আদান-প্রদান হবে। অর্থৎ ভৌগলিক অখন্ডতার হেরফের হবে। এ জন্য এই চুক্তির আগে সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। লোক সভায় দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা রয়েছে বিজেপির । কংগ্রেস দুই তিন বছর ধরে স্থল সীমান্ত চুক্তি বিলটি পাস করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। এবার সোনিয়া গান্ধীর পক্ষে সংসদে বিরোধীতা করা সম্ভব নয। তবে বিজেপির দলের মধ্যে মতবিরোধ মিটাতে পারলে রাজ্য সভায় ঝুলে থাকা বিলটি পাস করিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলে ধারণা বিজেপির।