বসনিয়া হার্জেগোভিনার সেব্রেনিৎসায় মুসলমানদের ওপর বর্বর সার্ব বাহিনীর ভয়াবহ গণহত্যার ২৭তম বার্ষিকী পালিত হয়েছে। গতকাল (সোমবার) এ উপলক্ষে সেব্রেনিৎসার পোটোচারি কবরস্থানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেশটির রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও সামরিক ব্যক্তিত্ব, বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, নিহতদের পরিবারবর্গসহ সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ওই গণহত্যার শিকার আরো ৫০ ব্যক্তির দেহাবশেষ দাফন করা হয়। এর ফলে এই কবরস্থানে দাফন করা হতভাগ্য মানুষের সংখ্যা ৬,৭২১ জনে উন্নীত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বসিনিয়ার বিভিন্ন স্থানের গণকবর থেকে এসব দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এসব দেহাবশেষের পরিচয় শনাক্ত করা হয়।

১৯৯৫ সালের পর থেকে প্রতি বছর ১১ জুলাই নতুন করে আবিষ্কৃত দেহাবশেষ দাফন করা হয়।কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিগত দুই বছর শুধুমাত্র নিহত ব্যক্তিদের সীমিত সংখ্যক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। তবে এ বছর করোনার বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় সোমবারের অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

১৯৯৫ সালের ১১ই জুলাই সার্বীয় বাহিনী বসনিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় সেব্রেনিৎসা এলাকা দখল করে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ ঘোষিত হওয়া সত্ত্বেও এবং জাতিসংঘের ডাচ শান্তিরক্ষীদের উপস্থিতিতেই সেব্রেনিৎসায় চালানো হয় নারকীয় গণহত্যা ও জাতিগত শুদ্ধি অভিযান।

সেব্রেনিৎসা দখলের প্রথমদিন থেকেই সার্বীয় বাহিনী স্থানীয় বসনীয় জনগোষ্ঠীর সকল পুরুষকে আলাদা করে নেয়। পরে তাদেরকে গণহারে হত্যা করে। ১১ই জুলাই থেকে ২২ই জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন সেব্রেনিৎসার কোথাও না কোথাও এই গণহারে হত্যার ঘটনা ঘটেতে থাকে। হত্যার শিকার ব্যক্তিদেরকে মৃত্যুর আগে নিজেদের কবর খনন করতে সার্বীয় বাহিনী বাধ্য করে। জুলাই মাসের ২২ তারিখের শেষ নাগাদ এরকম আট হাজারেরও বেশি বসনীয় পুরুষ ও বালক গণহত্যার শিকার হয়। এই গণহত্যা চলার সময় জাতিসংঘ নীরবতা পালন করলেও পরে একে ‘জাতিগত শুদ্ধি অভিযান’ বলে স্বীকৃতি দেয়।#

পার্সটুডে