পাবনার হেমায়েতপুরে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুল চন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমের সেবক নিত্যরঞ্জন পাণ্ডেকে (৬২) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নাটোরে খ্রিস্টান ব্যবসায়ী ও ঝিনাইদহে হিন্দু পুরোহিত হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই এই হিন্দু আশ্রম সেবককে একই কায়দায় হত্যা করা হলো।
আজ (শুক্রবার) সকাল সোয়া ৬টার দিকে সেবাশ্রমের ২০০ গজ দূরে হেমায়েতপুরের পাবনা মানসিক হাসপাতালের প্রধান ফটকের কাছে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিত্যরঞ্জন পাণ্ডে গোপালগঞ্জ সদরের আরুয়া কংশু এলাকার মৃত রশিক লাল পাণ্ডের ছেলে। তিনি প্রায় ৩৮ বছর এই আশ্রমের সেবক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল হাসান জানান, প্রতিদিনের মতো ভোরে রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়ে ছিলেন নিত্যরঞ্জন পাণ্ডে। পাবনা মানসিক হাসপাতালের উত্তরপাশে প্রধান গেটে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা পেছন থেকে তার ঘাড়ে ও মাথায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান নিত্যরঞ্জন পাণ্ডে। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। তবে কারা, কী কারণে নিত্যরঞ্জনকে হত্যা করেছে, তা জানাতে পারেননি ওসি।
সেবাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক যুগল কিশোর ঘোষ জানান, “গত ৪০ বছর ধরে এই আশ্রমে আশ্রিত থেকে সে ধর্ম সেবা দিয়ে আাসছিলেন নিত্যরঞ্জন। ডায়াবেটিস ছিল বলে প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হতেন। আজও হাঁটতে বেরিয়ে খুন হয়ে গেলেন।”
স্থানীয় এনজিও কর্মী নরেশ মধু বলেন, “উনি দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। এ এলাকারই মানুষ হয়ে গিয়েছিলেন। সৎসঙ্গ সেবাশ্রমে কাজ করতেন। সাদামাটা মানুষ, কোনো শত্রু ছিল বলে শুনিনি।” বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক হামলার মত নিত্যরঞ্জন হত্যার পেছনেও জঙ্গিদের হাত থাকতে পারে বলে তার সন্দেহ।
এদিকে, এই হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পাবনা পুলিশ সুপার (এসপি) আলমগীর কবিরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। পুলিশ সুপার আলমগীর কবীর বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এই হত্যার মিল রয়েছে। একই গোষ্ঠী এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।
গত ৫ জুন চট্টগ্রামে দুর্বৃত্তদের গুলিতে ঢাকার পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু (৩৫) নিহত হন। একই দিন নাটোরে দুর্বৃত্তরা খ্রিস্টান মুদি দোকানি সুনীল গোমেজকে (৬৫) কুপিয়ে হত্যা করে। এর দুদিন পর ৭ জুন ঝিনাইদহে আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীকে (৬৫) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।