নির্বাচনি প্রচারে বিশ্বের সব দেশের নেতাদেরই একই চরিত্র। চিন্তাধারা, ব্যক্তিত্ব, সংস্কৃতিতে ভিন্নতা দেখা গেলেও ভোটের মৌসুমে সবাই এক। ভোটারদের মন জয়ে পাড়া-মহল্লার অলিগলি থেকে শুরু করে বাড়িতে, দোকানে, রাস্তাঘাটে, সবখানেই পা রাখেন নেতারা। বিশেষ করে ধর্মীয় স্থানগুলাতে। ভোটার কাবু করতে নেতাদের মোক্ষম এ অস্ত্রের দেখা মিলল তাইওয়ানের নির্বাচনি যুদ্ধেও। ১৩ জানুয়ারি দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। প্রধান দলগুলোর মাধ্যমে মনোনীত তিনজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নিয়ে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।

ইতোমধ্যেই জোরদারভাবে নির্বাচনি প্রচারে নেমেছেন নেতারা। আর প্রচারের শীর্ষস্থান হিসেবে তাদের ধর্মীয় স্থানকেই বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রধান প্রার্থীরা ততই মন্দিরমুখী হচ্ছেন। দিনের বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছেন সেখানেই। ধর্মের শিকড়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনসহ জয়ের আশায়, মন্দিরে মন্দিরেই চলছে নির্বাচনি প্রচার। সিএনএন, রয়টার্স, আলজাজিরা।

তাইওয়ানের রাজনৈতিক অবকাঠামো মূলত দুটি দলে বিভক্ত : ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি) এবং কুওমিনতাং (কেএমটি)। ডিপিপি মূলত তাইওয়ানের স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে। অন্যদিকে কেএমটি চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক সমর্থন করে। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে তাইওয়ান পিপলস পার্টি (টিপিপি) নামে পরিচিত আরেক একটি তৃতীয় দলও রয়েছে। এ দলের প্রতিষ্ঠাতা দেশটির রাজধানী তাইপেইয়ের সাবেক মেয়র ও রাজনৈতিক নেতা কো ওয়েন-জে। ডিপিপি থেকে তাইওয়ানের ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই চিং-তে (৬৪), কেএমটির থেকে নিউ তাইপেইয়ের মেয়র হাউ ইউ-ইহ (৬৬) এবং টিপিপি থেকে কো ওয়েন-জে (৬৪) প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে মনোনীত হয়েছেন।

সর্বশেষ জরিপ অনুসারে, ডিপিপি উইলিয়াম লাই এখনো নির্বাচনের দৌড়ে এগিয়ে আছেন। উইলিয়াম লাই তাইওয়ানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের অবস্থানের প্রতিধ্বনি করেছেন। ইং-ওয়েন পরপর দুবার প্রেসিডেন্ট পদে জয় লাভ করেছেন। তবে এবার অনেকেই ধারণা করছেন, এগিয়ে থাকলেও উইলিয়াম লাই জয়ের মুকুট নাও পেতে পারেন। কারণ এর আগে কোনো দলই তাইওয়ানে টানা তিনবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়নি। সাম্প্রতিক জরিপগুলোও ইঙ্গিত করেছে, জনগণ বর্তমান অবস্থার প্রতি অসন্তুষ্ট। আট বছরের ডিপিপি শাসনের সরকার পরিবর্তনের পক্ষে রয়েছে অনেকেই।

নিজেদের খুঁটি শক্ত করার আশায় মন্দিরে প্রচারণার কাজ চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। নিউ তাইপেই শহরের ঝোংহে জেলার সবচেয়ে বড় লিক্সিং ফুদে মন্দিরে বৃহস্পতিবার ধূপ জ্বালিয়েছেন উইলিয়াম লাই। তাইওয়ানের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং শান্তির জন্য প্রার্থনা করেছেন। এরপর স্থানীয় দল, মন্দিরের নেতাসহ প্রায় ২০০ মানুষের ভিড়ে ভাষণ দিয়েছেন। মন্দিরের পরিচালক লিন কুয়ান-জেন বলেছেন, মন্দিরগুলো দীর্ঘদিন ধরেই দেশটির গণতান্ত্রিক উন্নয়ন এবং বাক-স্বাধীনতার জন্য একটি সর্বজনীন স্থান হয়ে উঠেছে। তারা মনে করেন মন্দিরগুলো শুধু প্রার্থীদের ভোটারদের সঙ্গে দেখা করার জন্য সুবিধাজনক স্থান নয়। বরং নির্বাচনের সময় সৌভাগ্যের জন্য প্রার্থনা করার মাধ্যমে দেব-দেবীদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা দেখানোরও একটি উপায়। তবে সমালোচকরা বলছেন ভিন্নকথা। তাদের কথা- নির্বাচন এলেই ধার্মিক হয়ে ওঠেন নেতারা। এটাই রজনীতিবিদদের চরিত্র।

আমেরিকান ইনস্টিটিউট অনুসারে, তাইওয়ানের প্রায় ২৮ শতাংশ মানুষ হিন্দুধর্ম, ২০ শতাংশ বৌদ্ধধর্ম এবং ১৯ শতাংশ তাও ধর্ম পালন করে থাকে। ২৫ শতাংশ নাগরিক আবার কোনো ধর্মই পালন করেন না। তাইওয়ানের স্থানীয় উপাসনালয়গুলোর বেশিরভাগই বৌদ্ধ, তাওবাদী, এমনকি খ্রিষ্টান অনুশীলনগুলোকে একত্রিত করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুসারে, তাইওয়ানে প্রায় ৩৩ হাজার উপাসনালয় রয়েছে। গড়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় একটি। নির্বাচন উপলক্ষ্যে প্রায় সবগুলো উপাসনালয়েই এখন পা পড়ছে নেতাদের। দেশটিতে এবার প্রায় ১০ লাখ নাগরিক ভোটে অংশগ্রহণ করবেন। ন্যূনতম ভোট দেওয়ার বয়স ২০। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র খোলা থাকবে। রাত ৮টার মধ্যে ফলাফল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন প্রেসিডেন্ট ২০ মে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।