আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা তার আগে-পরে কোনো ধরনের সংঘর্ষে না জড়াতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। চলমান ভোট বর্জন ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে হরতালসহ আগামী দিনে ঘোষিত সব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালনে সংগঠনের সর্বস্তরে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগের দিন (৬ জানুয়ারি) এবং নির্বাচনের দিন (৭ জানুয়ারি) হরতালের ডাক দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলটির এমন কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হচ্ছে একতরফা নির্বাচনের প্রতিবাদ জানানো এবং ভোটারদের ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করা।

‘নির্বাচনের দিন বিএনপি সহিংসতা চালাতে পারে’ সরকারি দলের এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে দলটির নীতি-কৌশলের সাথে জড়িতরা বলেছেন, ভোট ঠেকানো কিংবা প্রতিহত করবে না বিএনপি। বিএনপি ভোট বর্জন করেছে। জনগণও বিএনপির এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। সেক্ষেত্রে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রয়োজন নেই।

নেতারা জানান, বিএনপি নেতাদের আশঙ্কা ২৮ অক্টোবরের মতো সরকারি দলের নেতাকর্মীরা সহিংসতা করতে পারে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নির্বাচনের আগের দিন বা নির্বাচনের দিন সার্বিক পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। সেরকম কিছু ঘটলে সঙ্গতকারণে তার দায়ভার বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হবে।

নেতারা জানান, জনগণকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশব্যাপী প্রচারণা, লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে দলটি। সরকারের যেকোনো উসকানিতে পা না দিয়ে নির্বাচনের দিনও সর্বোচ্চ সংযম ও ধৈর্য প্রদর্শন করতে চায় তারা।

বিএনপির নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন, সরকার এবং নির্বাচন কমিশন মিলে নির্বাচনের নামে যে তামাশা, নাটক চালাচ্ছে-জনগণ সে ব্যাপারে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল। ফলে বিএনপি দেশের মানুষকে নির্বাচন বয়কটের যে আহ্বান জানিয়েছে, জনগণ সেটাতে সাড়া দিবে এবং ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে সরকার ও নির্বাচনের প্রতি তাদের চূড়ান্ত অনাস্থা প্রকাশ করবে।

প্রসঙ্গত, সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে গত ১৪ জুলাই থেকে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ ডাকে দলটি। কিন্তু পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ওই মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর চার দফায় ৫ দিন হরতাল এবং ১২ দফায় ২৩ দিন অবরোধ কর্মসূচি করে বিএনপি। এরপর ভোটের দিন ঘনিয়ে আসায় জনগণকে ভোট বর্জনের পাশাপাশি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। তারপর থেকে জনগণকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে দেশব্যাপী গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি চলছে। আজ (বৃহস্পতিবার) পঞ্চম দফার এই গণসংযোগ কর্মসূচি শেষ হবে।

বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ভোট বর্জনের আহ্বানে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) ঢাকায় গণমিছিল কিংবা পেশাজীবীদের ব্যানারে সমাবেশ করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে বিএনপি ও যুগপৎ শরিকদের। বিকল্প হিসেবে গণসংযোগ কর্মসূচির বিষয়টিও বিবেচনায় রেখেছে তারা।

যদিও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিলে শুক্রবার সকাল ৮টায় সব ধরনের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা-সভা-সমাবেশ-গণজমায়েতের সময় শেষ হওয়ায় এই কর্মসূচি করতে পারা নিয়ে সংশয় রয়েছে তাদের। সে কারণে ৭ জানুয়ারি (সোমবার) এবং আগের দিন রোববার হরতাল দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শুধু ভোটের দিনও হরতাল দেওয়া হতে পারে। সরকারি কোনো উসকানিতে পা না দিয়ে, যে কর্মসূচিই দেওয়া হোক না কেনো-তা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে তৃণমূলসহ সব নেতাকর্মীদের কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ভোট ঠেকানো কিংবা ভোট প্রতিহত করা বিএনপির আন্দোলনের লক্ষ্য নয়। বিএনপি এই একতরফা, ডামি নির্বাচন বর্জন করেছে। দেশবাসীকেও এই নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করছে। বিএনপি মনে করে, জনগণ ইতোমধ্যে তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচন ঘিরে কী হচ্ছে তা শুধু দেশের জনগণই নয়, আন্তর্জাতিক বিশ্বও ওয়াকিবহাল রয়েছে। এটি সরকারের একটি পাতানো নির্বাচন-যেখানে সরকারি দলের প্রার্থীরা, সরকারি দলের সমর্থকরাই অংশ নিচ্ছেন এবং যে যেখানেই ভোট দিক না কেন, নির্বাচনে জয়ী হবে আওয়ামী লীগ। বিএনপি ভোট বর্জনের যে আহ্বান জানিয়েছে তা অব্যাহত রাখবে। নির্বাচনের দিন ঘিরে বিএনপি যে কর্মসূচি দিবে সেটিও শান্তিপূর্ণ আহ্বানের মধ্য দিয়ে পালিত হবে।

এদিকে, হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে সংঘটিত নাশকতার ঘটনায় গত রোববার জাতিসংঘসহ ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দূতাবাসে চিঠি দিয়েছে দলটি। ই-মেইলে পাঠানো সাত পৃষ্ঠার এই চিঠিতে সম্প্রতি সংঘটিত অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতার জন্য সরকারকে দায়ী করা হয়েছে। দলটির দাবি, জনসম্পৃক্ত চলমান আন্দোলন নস্যাৎ করতে সরকারি মদদে বিভিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপির ওপর তার দায় চাপানো হচ্ছে।