আসন ভাগাভাগি নিয়ে নির্বাচন বয়কটের জল্পনা-কল্পনার মধ্য দিয়ে অবশেষে ২৮৩ আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তবে কত আসনে সমঝোতা হয়েছে তা পরিষ্কার করে কিছুই জানাননি তিনি। বরং, সিনিয়র নেতাদের কিছু নির্দিষ্ট আসনে নৌকা প্রত্যাহার প্রশ্নে সরাসরি কোনও উত্তর না দিয়ে ‘নির্বাচনী কৌশল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন চুন্নু।

রোববার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে দলের চেয়ারম্যানের বনানী অফিসে সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব এসব কথা বলেন। তিনি দলের সব প্রার্থীকে নির্বাচনের জন্য আজকেই চিঠি দেওয়া কথা জানিয়ে কালকে যাতে প্রতীক বরাদ্দ নেন, সে নির্দেশনা দেন।

সব বাধা অতিক্রম করে জাতীয় পার্টি নির্বাচনী মাঠে খেলে যাবে ঘোষণা দিয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমরা নির্বাচন করছি ২৮৩ আসনে। সেখানে অন্য কোনও দলের কোন প্রার্থী আছে, কী স্বতন্ত্র আছে, বিদ্রোহী প্রার্থী আছে- এগুলো আমরা চিন্তা করছি না। আমরা যুদ্ধ করে যাবো, খেলে যাবো। আর যেটা বলছেন, (আসন সমন্বয়) সেটা নির্বাচিত একটা থাকতে পারে। কোনও আসনের বিষয়ে সেটা এখনও সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের বলার সুযোগ নেই। এটা আমাদের নির্বাচনের কৌশল। সেই কৌশলের কারণে আমরা বলছি না।

নৌকা প্রত্যাহার করবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে চুন্নু বলেন, আমরা ২৮৩ আসনে নির্বাচন করছি, আওয়ামী লীগও করছে। কিছু কিছু জায়গায় কৌশল থাকতে পারে। সে কৌশল আমরা এখনই বলার প্রয়োজন মনে করছি না।

তিনি আরও বলেন, আমরা ২৮৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো। যেসব আসনে আমাদের প্রার্থীরা বৈধ হয়েছেন, সেসব আসনে আমরা নির্বাচন করবো। কিছু কিছু আসনে আমাদের অনেকেই আছেন, যারা সিনিয়র। এসব আসনে যারা নির্বাচন করেন গতবারের মত সমঝোতা হয়েছে, কিংবা হবে। কথা হলো, আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি।

আসন নিয়ে আওয়ামী লীগের আশ্বাসে খুশি কি না জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব বলেন, দেখুন আমরা ২৮৩টি আসনে নির্বাচন করছি। মানুষের ভোটে বেশির ভাগ আসন যদি জয়লাভ করতে পারি, তখনই আমরা সন্তুষ্ট হবো।

কত আসনে সমঝোতা হয়েছে জানতে চাইলে চুন্নু বলেন, শিগগির জানতে পারবেন। আশা করি, আপনারা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারবেন। এখন আমরা এটুকু বলি, নির্বাচনে আমরা যাচ্ছি। সব বাধা অতিক্রম করে নির্বাচনটা আমরা জোরদারভাবে করবো। সেটাই আমরা ঘোষণা দিচ্ছি।

নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে কোনও চাপ ছিল কি না- এ প্রশ্নে বলেন, না, কোনও চাপ নেই। দেখুন, চাপ থাকলে তো আরও অনেকে নির্বাচন করছে না, তারাও আসতো। আমরা জাতীয় পার্টি স্বতন্ত্র দল, নিজস্ব রাজনীতি আছ। নিজেদের গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচি আছে। আমরা দেশের মানুষের জন্য কী করতে চাই, তার জন্য রূপরেখা তৈরি করেছি। আমরা স্বাধীনভাবেই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

জাতীয় পার্টি দ্বাদশ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জানিয়ে চুন্নু আরও বলেন, সরকারের কাছে আমাদের একটা দাবি ছিল, নির্বাচন কমিশনের কাছেও। যাতে ভাল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যদি মানুষের আস্থা থাকে তাহলে জাতীয় পার্টি নির্বাচন করবে এবং শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে। এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের বিভিন্ন মহলের আশ্বাসে আমাদের মোটামুটিভাবে একটা আস্থা এসেছে, তারা নির্বাচনটা ভালভাবেই করতে চায়। সে লক্ষ্যে সরকার নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তারা আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নির্বাচনটা যাতে ভালভাবে হয় এজন্য যা যা সহযোগিতা দরকার তারা করবে। এ কারণে আমরা জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে, চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের পক্ষ থেকে সব দলীয় প্রার্থীকে অনুরোধ করছি যে, আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। নির্বাচন যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়, সেজন্য আমরা কাজ করে যাবো। আমরা আশাবাদী, নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য ভোটে অংশগ্রহণ করবে। মানুষ এখন অনেক সচেতন। আশা করি, নির্বাচনের মাধ্যম আমরা সব অপচেষ্টা দূর করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করতে পারবো।

এ সময় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, সোলায়মান আলম শেঠসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।