বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘নিশিরাতের সরকারের দুর্নীতি-দুঃশাসনে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। অর্ধাহারে-অনাহারে কাটছে কৃষক শ্রমিক দিনমজুরের দিনকাল। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। চরম অর্থনৈতিক মন্দা। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আবারও ক্ষমতায় থাকতে একতরফা প্রহসনের নির্বাচনে রাষ্ট্রের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ‘শ্রাদ্ধ’ করার আয়োজন চলছে। গণঅভিপ্রায়কে উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ এবং কতিপয় গোত্রহীন ভূঁইফোড় দলছুট লোককে নিয়ে ডামি নির্বাচনে জনগণের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনষ্টের হিসাব নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে।

শনিবার রাতে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, ‘মাত্র একজন ব্যক্তির অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার উদগ্র লিপ্সার কারণে বাংলাদেশ এখন চরম বিপর্যয়ের মুখে পতিত হয়েছে। বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য এবং আওয়ামী দুর্নীতিবাজরা দেশটাকে তাদের লুটপাটের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে। আওয়ামী লুটেরা চক্র শুধু অর্থনৈতিকভাবে দেশটাকে দেউলিয়া করেনি, দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতাও বিপন্ন করে দিয়েছে। লুটেরা চক্র শুধু বর্তমান প্রজš§কেই নয়, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও ঋণে ডুবিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে সরকারের মন্ত্রীরাও বলতে শুরু করেছেন এই পাতানো প্রতিযোগিতাহীন ভুয়া নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে তারা ঘোরতর সন্দিহান। আওয়ামী লীগ সরকারের একজন মন্ত্রী এক সভায় বলেছেন, আমরা বিশাল ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছি। আমাদের ৭ তারিখ নির্বাচন, এখনো জানি না সেটা হবে কি না। একটা অনিশ্চিত অবস্থা। বাস্তবতা হলো, দেশের ১৮ কোটি জনগণ এই নির্বাচন করতে দেবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচন দেশের মাটিতে হবে না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গণতান্ত্রিক বিশ্বের সমস্ত হুঁশিয়ারি ও আহ্বান উপেক্ষা করে পাতানো ডামি নির্বাচনের সার্কাস করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই নির্বাচনি প্রহসন জেনে গেছে গোটা বিশ্ব। দেশের জনগণের আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বের সঙ্গে প্রকাশ্যে লড়াইয়ে নেমেছেন শেখ হাসিনা। অচিরেই তার ক্ষমতায় থাকার সাধ চূর্ণ-বিচূর্ণ হবেই। এখন একমাত্র পতনই প্রধানমন্ত্রীর নিয়তি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে মামলা, হামলা এবং গণগ্রেফতার করে বিএনপিসহ ৬০টির বেশি রাজনৈতিক দলকে মাঠছাড়া করতে চালানো হচ্ছে অমানুষিক নিপীড়ন। রাজবাড়ীসহ জেলায় জেলায় লাল বাহিনী তৈরি করে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-নির্যাতনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নিম্ন আদালতকে ব্যবহার করে দণ্ড দিয়ে বিএনপির নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, বিএনপি চাইলেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।’

রিজভী বলেন, ‘২ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেরোরিজম-২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেছে এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থা ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহ বাংলাদেশে বিরোধী দলের ওপর জুলুম-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরছে। শুক্রবার জাতিসংঘ পুনরায় বলেছে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হবে সবার অংশগ্রহণে। কিন্তু শেখ হাসিনা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে এক সর্বনাশা ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছেন। এর পরিণতি তার জন্য শুভ হবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী জানান, শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত সারা দেশে ২২৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই সময়ে ৮ মামলায় ৯১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।