আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জাতীয় পার্টি। ইতোমধ্যে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষ হয়েছে।

যদিও শুক্রবার থেকে টানা বৈঠকে প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত করলেও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি দলটি।

আজ সোমবার (২৭ নভেম্বর) বিকাল ৪টায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।

রোববার (২৬ নভেম্বর) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী।

তালিকা প্রকাশের পরই পরিষ্কার হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কাদের কপালে জুটল দলীয় প্রতীক লাঙ্গল।

এদিকে মনোনয়ন প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান ও প্রধান পৃষ্ঠপোষকের মধ্যে এক প্রকার ঘোলাটে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

দলের প্রধান পৃষ্টপোষক রওশন এরশাদ কোনো আসন থেকেই মনোনয়ন নেননি। বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও প্রধান পৃষ্টপোষক রওশন এরশাদের মধ্যে এক প্রকার পরস্পর বিরোধী অবস্থান বিভিন্ন সময় দেখা যায়। যা রাজনীতির পাড়ায় দেবর-ভাবি দ্বন্দ্ব নামে খ্যাতি পেয়েছে।

এবার দেবর- ভাবির এই বিরোধের আগুনের মধ্যে নতুন করে ঘি ঢালা হিসেবে কাজ করবে যখন ভাতিজার আসনে চোখ পড়বে চাচার।

জাতীয় পার্টির সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-১৭ এবং রংপুর-৩ আসন থেকে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের।

রংপুর-৩ আসনে বর্তমানে জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য হিসাবে রয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও রওশন এরশাদ পুত্র রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ।

আগামী নির্বাচনে রংপুর-৩ আসন থেকে জিএম কাদের নির্বাচন করলে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের সঙ্গে পার্টির চেয়ারম্যানের মধ্যে বিরোধ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন দলটির অধিকাংশ নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে ইতোমধ্যে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের সঙ্গে চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বের নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

এই আসনে জিএম কাদের নির্বাচন করার উদ্দেশ্যে মনোনয়ন সংগ্রহের কারণে দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও তার ছেলে সাদ এরশাদ এখন পর্যন্ত মনোনয়ন সংগ্রহ করেননি বলে এমন আলোচনা জাতীয় পার্টির মধ্যে চলছে।

জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের চেয়ারম্যান হিসেবে যেকোনো আসনে মনোনয়ন তুলতে পারেন জিএম কাদের।

তাদের মতে, এবিষয়ে কারও কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও রওশন এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদ দলের কোনো বিষয়ে তেমন একটা কথা বলেন না। তাই দলের চেয়ারম্যান হিসেবে রংপুর থেকে জিএম কাদের নির্বাচন করতে চাইলে সাদ এরশাদকে নিয়ে ভাবি রওশন এরশাদের সঙ্গে বিরোধ আরও বাড়তে পারে এমন কথা চিন্তা করার আপাতত কোনো অবকাশ নেই।

যদিও এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু গণমাধ্যমে বলেন, আমাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রেগম রওশন এরশাদ, তার ছেলে সাদ এরশাদ এবং ডা. কে আর ইসলাম যদি নির্বাচন করেন আমরা মনোনয়ন ফরম দেব, তাদের স্বাগত জানাব। আমরা চাই বেগম রওশন এরশাদ যেন নির্বাচনে আসেন। আমরা তাকে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করব।

জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কাঠামোয় কোনো বিভেদ নেই জানিয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জিএম কাদেরের নেতৃত্বের বাইরে কেউ নেই। জাতীয় পার্টি এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। জাতীয় পার্টি এখন অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। জাতীয় পার্টিতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কোনো অবকাশ নেই।

উল্লেখ্য, সোমবার (২০ নভেম্বর) থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করে জাতীয় পার্টি। দুই দফায় পাঁচ দিনব্যাপী মনোনয়ন ফরম বিতরণ শেষ হয় বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর)। দলটির মনোনয়ন ফরম নেন ১ হাজার ৭৫২ জন। পরে শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ দিয়ে শুরু হয় জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ।

আর রোববার (২৬ নভেম্বর) ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া মাধ্যমে শেষ হয়। আজ সোমবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে দলটি।

তবে শনিবার (২৫ নভেম্বর) ঢাকার দুটি আসনের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও তার স্ত্রী শেরীফা কাদের।