আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে সংঘাতে যত শিশু নিহত হয়েছে, গাজায় গত তিন সপ্তাহে তার চেয়ে বেশি শিশু নিহত হয়েছে।

Google news
রোববার সংস্থাটির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের অবিরাম বিমান ও রকেট হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৩ হাজার ৩২৪ শিশু এবং পশ্চিম তীরে আরও ৩৬ শিশু নিহত হয়েছে। এছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছে আরও ১ হাজার শিশু।

সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, শিশু ও সশস্ত্র সংঘাতবিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে ২৪টি দেশে মোট ২ হাজার ৯৮৫ শিশু, ২০২১ সালে ২ হাজার ৫১৫ এবং ২০২০ সালে ২২টি দেশে ২ হাজার ৬৭৪ শিশু নিহত হয়েছিল।

সেভ দ্য চিলড্রেনের ফিলিস্তিনের কান্ট্রি ডিরেক্টর জেসন লি বলেন, ‘একটি শিশু নিহতের ঘটনাই অনেক বড় কিছু, সেখানে হাজার হাজার শিশু নিহতের ঘটনা নিঃসন্দেহে মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন। একটি যুদ্ধবিরতি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই রাজনীতির আগে জনগণকে রাখতে হবে। চলমান যুদ্ধে প্রতিদিন শিশুরা নিহত ও আহত হচ্ছে। গাজায় এমন কোনো স্থান নেই- যেখানে শিশুরা নিরাপদ বোধ করতে পারে। শিশুদের অবশ্যই সুরক্ষিত রাখতে হবে, বিশেষ করে যখন তারা স্কুল এবং হাসপাতালে নিরাপত্তা চাইছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এই যুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে গাজায় শিগগিরই যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানাচ্ছি এবং প্রত্যাশা করছি, শিশুদের নিরাপত্তার ব্যাপারটি বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ব্যাপারে আরও তৎপর হবে।’

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গাজায় আরও এক হাজার শিশু নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, তারা ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে থাকতে পারে।

গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় এখন পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি শিশু। এছাড়া ছয় হাজারের বেশি শিশু আহত হয়েছে।

অপরদিকে, হামাসের হামলায় অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিক নিহত হয়েছে। বেশিরভাগই ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় নিহত হয়।

ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ‘সম্পূর্ণ অবরোধ’ আরোপ করেছে। যা ২০০৭ সাল থেকে উপত্যকায় জারি থাকা অবিরোধের তুলনায় অনেক বেশি কঠোর। চলমান অবরোধে গাজায় খাবার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানিসহ সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল এবং ২১ অক্টোবর থেকে মিশরের রাফাহ ক্রসিং দিয়ে অল্প পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে।

বিদ্যুৎ ও ওষুধের অভাবে গাজার হাসপাতালগুলো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ‘সম্পূর্ণ ভেঙে’ পড়েছে বলে জানিয়েছে। এ পরিস্থিতি মানুষজনের জীবনকে আরও বিপন্ন করে তুলেছে, যার মধ্যে শিশুও রয়েছে।