জনগণের মধ্যে এখন আর ভয় নেই মন্তব্য করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, এই সরকার ভয় দেখিয়ে ১৫ বছর শাসন করেছে। এখন মানুষের ভয় ভেঙে গেছে।

মানুষ একবার যখন ঘুরে দাঁড়াবে, তখন ওরাই (সরকার) দেখবেন পালানোর পথ পাবে না।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়: বাংলাদেশ কোন পথে?’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরাম।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক আরও বলেন, মানুষ এই সরকারকে চায় না। আমরা (বিরোধী দল) যদি আন্দোলন নাও করতাম, তবুও মানুষ বলতো, এর থেকে বাঁচতে চাই। দেশে প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বেশি, আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। আইনশৃঙ্খলা শুধু আমাদের (বিরোধী দল) জন্য, আর যতকিছু অন্যায়, অত্যাচার, লুটপাট, অর্থকড়ি কামানো, এগুলো করছে ক্ষমতাসীন দল। অতএব ওনারা ক্ষমতা থেকে যেতে চান না, ভয় পান। এখন যদি ক্ষমতা থেকে চলে যেতে হয়, তাদের বিচার করা হবে। মানুষের ওপর তারা যে অন্যায় করেছে, মানুষ যদি এর প্রতিবাদ প্রতিরোধ করে, তাহলে তারা দাঁড়াবে কোথায়?

তিনি আরও বলেন, দেশ থেকে প্রতি বছর শুধু ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশে টাকা পাচার হয় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। আর ব্যাংকিংয়ের বাইরে, হুন্ডি এবং অন্যান্য সিস্টেমে পাচার হয় আরও এক লক্ষ কোটি টাকার বেশি। দেশের মানুষ মারা যাচ্ছে, ওনারা (সরকার) বিলাসিতা করছেন।

ডাকসুর সাবেক ভিপি আরও বলেন, আমরা গত এক বছর, দেড় বছরে প্রমাণ করেছি যে বিএনপিসহ সবগুলো বিরোধী দল কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করেনি। আমরা বলছি, নির্বাচনের আগে ক্ষমতা ছেড়ে একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হোক, যাতে সবাই বিশ্বাস করতে পারে। কিন্তু ওনারা (সরকার) এটা দেবেন না। ওনারা বলছেন, সংবিধানের বাইরে যাবেন না। সংবিধানের বাইরে যাননি আপনারা আগে? সংবিধানের বাইরে এখন যাচ্ছেন না? সংবিধানকে অপমান, লঙ্ঘন করছেন না? যে সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়েছে, সেই সংশোধনীই তো অবৈধ।

২৮ তারিখে রাজপথ দখল করে সভা করবেন হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আজকেও প্রেসক্লাবের সামনে রাজপথ দখল করে সভা হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে পারবে? পারবে না। কারণ আগে আগে লড়াই হয়েছে সরকারি দল আর বিরোধী দলের মধ্যে। এবারের লড়াই এই সরকারের দুর্নীতি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তাদের এসব দুর্নীতি অন্যায় দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে গেছে। সবাই জানে এই সরকার অন্যায়ভাবে বিরোধী দল, সাধারণ মানুষকে ক্রসফায়ারে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পত্রিকায় লিখেছে, ওরা (আওয়ামী লীগ) নাকি এবার আক্রমণাত্মক হবে। ওরা সভা সমাবেশ করতে দেবে না। আমলা পাড়ায় সবাই ভয়ে আছে, পুলিশ ভয়ে আছে। সরকার যে পুলিশকে বিশ্বাস করে না সেটার প্রমাণ- তারা আনসারকে ক্ষমতা দিচ্ছে যে কাউকে গ্রেপ্তার, সার্চ ও ব্যবস্থা নেওয়ার। আর্মির, পুলিশের প্রভাব কমানোর চেষ্টা করছে। এখন আনসারকে নিচ্ছে।

সরকার ২৮ তারিখের সমাবেশ ঠেকাতে পারবে কি না প্রশ্ন করে গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা আরও বলেন, সমস্ত শক্তি নিয়ে বাধা দিলেও পারবে না। আওয়ামী লীগের পরাজয় গত মাসের ২৮ তারিখে একবার হয়েছে। ওই সমাবেশেই ১০-১৫ লাখ লোকের সমাবেশ হয়েছে। এবার আমরা বলছি, এর থেকে বড় সমাবেশ করবো। দুনিয়া তাক লেগে যাবে, এতগুলো মানুষ সরকারকে চায় না।

তিনি আরও বলেন, আমরা ২৮ তারিখে সমাবেশ ডেকেছি, আওয়ামী লীগের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা বলছে, তারা অবরোধ করতে দেবে না, ঘেরাও করতে দেবে না। আমরা কি বলেছি, আমরা ওইদিন অবরোধ করবো? মির্জা খররুল ইসলাম আলমীগর বলেছেন, আমরা ২৮ তারিখ অবরোধ দেবো না। ২৮ তারিখে আমরা কোথাও বসেও পড়ব না। কিন্তু ২৮ তারিখে সারা দেশ থেকে লোক আসবে। তাদের সামনে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। এই আন্দোলন কেবল ঢাকায় নয়, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।

আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. আহমেদ আযম খান বলেন, সরকারকে খুশি করার জন্য সব আদালত যেনো প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিচার কাজ চলে। অর্থাৎ, আগামী এক মাসের মধ্যে নির্বাচনী মনোনয়ন পত্র দাখিলের আগে বিরোধী দলীয় সব সম্ভাব্য প্রার্থীকে সাজা দিয়ে ফেলতে তো হবে।

বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, এখন জনগণের বিদ্রোহের, আন্দোলনের, গণঅভ্যুত্থানের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়। আর ছাড় দেওয়া হবে না। এবার জনগণ ক্ষেপে উঠেছে। ওইদিন (২৮ অক্টোবর) দেখবেন, মহাসমাবেশ নয়, জনপ্লাবন তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সঞ্চালনা করেন ফোরামের সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান শামীম।