আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বিলুপ্তি ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক দফা দাবিতে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে আসছে বিএনপি। বিএনপির সহ-সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রোডমার্চ, পদযাত্রা, বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও লিফলেট বিতরণ।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, কয়েকটি ধাপের আন্দোলন শেষে এবার চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা নিয়ে আসছে বিএনপি। চূড়ান্ত আন্দোলনের অংশ হিসেবে চলতি অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে দলটি। তবে এবারের কর্মসূচির অধিকাংশই থাকছে রাজধানীকেন্দ্রিক। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, সরকারকে আল্টিমেটাম দেওয়া, ঢাকামুখী রোড মার্চ, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় ঘেরাও ইত্যাদি।

সূত্রটি জানায়, চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলনে এ মাসের শেষ সপ্তাহে রাজধানীমুখী রোড মার্চ করার কথা আলোচনা হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতিদিন ঢাকার আশপাশের একটি জেলা থেকে রোড মার্চ নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসবে। সেখানে জনসভা হবে। এরপর সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন, সংসদ ভবন, বিচারাঙ্গন, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করা হতে পারে। তারপর প্রয়োজনে সড়ক ও নৌপথ অবরোধের মতো কর্মসূচিতে যেতে পারে দলটি।

সূত্রটি আরও জানায়, ঢাকাকেন্দ্রিক কর্মসূচিই দেওয়া হবে সামনে। ঘেরাও, অবস্থানের মতো কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কেমন কর্মসূচি আসবে, তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। সম্ভাব্য কর্মসূচিগুলোর বিষয়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যরা।

যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্য দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এক দফা আন্দোলন বাস্তবায়নে বৈঠক হচ্ছে। আমাদের একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আমরা একই দাবিতে একসঙ্গে আন্দোলনও করছি। এই আন্দোলনকে রাজপথে আরও কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি।

যুগপৎ আন্দোলনে থাকা একটি দলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষ এক নেতা বলেন, বৈঠকে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার ও ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে অনেক প্রস্তাব আসবে। কিন্তু কেউ লোভ-লালসায় পড়ে যাতে টোপ না গিলে। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, সমমনা দল ও জোটগুলোকে যুগপৎ আন্দোলনে সবাইকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে বলা হয়েছে। আর বলা হয়েছে যে, এই আন্দোলনে সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা নির্মাণ করব।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি জনগণের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এই আন্দোলন। চলতি মাসেই সরকার পতনের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে হবে। মূলত মাসের শেষ সপ্তাহে কঠোর কর্মসূচি থাকবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুজ্জামান শিমুল বিশ্বাস বলেন, আমাদের চলমান আন্দোলনে সারা দেশের মানুষ সাড়া দিয়েছে। চলমান এই আন্দোলন শেষ ধাপে রয়েছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

গত বছরের ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে সরকার পতনের আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করে বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এলডিপি, লেবার পার্টি, এনডিএমসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যুগপৎ ধারায় আন্দোলন করে আসছে।