ঐতিহাসিক এক সফরে রাশিয়ায় গিয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। সেখানে সামরিক বিষয়, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং উত্তর কোরিয়ার স্যাটেলাইট প্রোগ্রামের জন্য সম্ভাব্য রাশিয়ান সহায়তা নিয়ে আলোচনা করেন দুই নেতা।

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুই নেতার মধ্যে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। খবর রয়টার্সের।

এর আগে গত মঙ্গলবার সকালে কিম জং উন তার ব্যক্তিগত ট্রেনে করে রাশিয়ায় প্রবেশ করেন। এর পর দিন পুতিন কিমকে দেশটির দূরপ্রাচ্যে রাশিয়ার সবচেয়ে উন্নত মহাকাশ রকেট উৎক্ষেপণের স্থানের চারপাশে ঘুরিয়ে দেখান এবং উত্তর কোরিয়ার মহাকাশচারীকে মহাকাশে পাঠানোর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় কিমকে রকেট সম্পর্কে বিস্তারিত প্রশ্ন করতে দেখা যায়।

ওই সফরের পর ৭০ বছর বয়সি পুতিন এবং ৩৯ বছর বয়সি কিম তাদের মন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা আলোচনা করেন এবং এর পর বৈশ্বিক নানা ইস্যু ও একে অপরকে সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো নিয়েও আলোচনা করেন।

পরে তারা কামচাটকা কাঁকড়া ও মাশরুমসহ বিভিন্ন আইটেম দিয়ে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। সেখানে ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমের সঙ্গে মস্কোর ‘পবিত্র যুদ্ধে’ জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেন কিম। উত্তর কোরীয় এই নেতা তার গ্লাস উঁচিয়ে বলেন, ‘বৃহৎ মন্দ শক্তির শাস্তির জন্য চলমান পবিত্র সংগ্রামে রাশিয়ান সেনাবাহিনী এবং জনগণ অবশ্যই মহান বিজয় অর্জন করবে।’

যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য কিমের এ ধরনের সফরকে আসন্ন বলেছিল এবং মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে অস্ত্র আলোচনা সক্রিয়ভাবে অগ্রসর হচ্ছে। এ ছাড়া কিম ও পুতিন সম্ভবত ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করার বিষয়েও আলোচনা করবেন বলেও জানিয়েছিল দেশটি।

এমনকি রাশিয়ার কাছে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে হুশিয়ারিও উচ্চারণ করে রেখেছে ওয়াশিংটন। এ ছাড়া নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞাগুলো ‘আক্রমণাত্মকভাবে’ কার্যকর করার হুমকিও দিয়েছে দেশটি।

রয়টার্স বলছে, কিম রাশিয়াকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করতে পারে বলে মার্কিন ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইউক্রেনে ১৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধে রাশিয়া তার মজুত অস্ত্রের বিশাল অংশ ব্যয় করে ফেলেছে এবং অস্ত্রের পর্যাপ্ত সরবরাহ ঠিক রাখতে মস্কো উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র নিতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

যদিও মস্কো ও পিয়ংইয়ং এমন অভিপ্রায়ের কথা অস্বীকার করে চলেছে।

এদিকে বুধবারের ওই বৈঠকে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে পুতিন অসংখ্য ইঙ্গিত দিয়েছেন, কিন্তু সেসব বিষয়ে খুব কমই বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন তিনি। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু বুধবারের এই আলোচনায় অংশ নেন। ক্রেমলিন বলেছে, প্রতিবেশী এই দুই দেশের মধ্যে সংবেদনশীল যে আলোচনা হয়েছে তা উভয় দেশের ব্যক্তিগত বিষয়।

রাশিয়া কিমকে স্যাটেলাইট তৈরিতে সাহায্য করবে কিনা রুশ মিডিয়া এমন প্রশ্ন জানতে চাইলে পুতিন বলেন, ‘এ কারণেই আমরা এখানে এসেছি। উত্তর কোরিয়ার নেতার রকেট প্রকৌশলে প্রচুর আগ্রহ; তারা মহাকাশেও উন্নয়নের চেষ্টা করছে।’

তবে ওয়াশিংটন হুশিয়ারি দিয়ে বলেছে, রাশিয়া থেকে উত্তর কোরিয়ায় বা উত্তর কোরিয়া থেকে রাশিয়ায় অস্ত্র হস্তান্তরের কোনো ঘটনা ঘটলে উভয় দেশের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে। এমনকি ইউক্রেনে কয়েক হাজার সৈন্য হারানোর পর সাহায্যের জন্য পুতিন কিমের কাছে ‘ভিক্ষা’ করছেন বলেও মন্তব্য করেছে ওয়াশিংটন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘উত্তর কোরিয়া থেকে রাশিয়ায় অস্ত্র হস্তান্তর করা হবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক প্রস্তাবের লঙ্ঘন। অবশ্যই আমরা আক্রমণাত্মকভাবে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টায় অর্থায়নকারী সব পক্ষের বিরুদ্ধে আমাদের নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রয়োগ করেছি এবং আমরা সেই নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রয়োগ করতে থাকব এবং প্রয়োজন হলে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতেও দ্বিধা করব না।’

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইঙ্গিত দিয়েছেন, মস্কোকে সাবধানে চলতে হবে। তিনি বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যে কোনো দেশের যে কোনো ধরনের সহযোগিতার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে সম্মান করতে হবে।’

তবে এসব কিছু পাশ কাটিয়ে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের দিকে ইঙ্গিত করে কিম পুতিনের ‘সমস্ত সিদ্ধান্তের’ প্রতি তার ‘পূর্ণ ও নিঃশর্ত সমর্থন’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পশ্চিমা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য উত্তর কোরিয়ার আর্টিলারি শেল পাওয়ার আশা করছে রাশিয়া।