বিরোধী দলগুলো থেকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রিত্বের ‘প্রস্তাব’ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। কেউ যদি নির্বাচনকালীন সরকারে আসতে চায় তবেই সে সুযোগ মিলবে।

শনিবার (১২ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে সাম্যবাদী দল আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রস্তাব দেন।

আমু বলেন, সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। ১৪ দল সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। নির্বাচনকালীন সরকারে যদি কেউ আসতে চায় আমরা টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে শতকরা যতজন পাই, দিতে পারি। সুতরাং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্পণ্যতা নেই। তবে সংবিধান মেনে চলতে হবে। কথায় কথায় সংবিধান পরিবর্তনের কথা মেনে নেওয়া হবে না। আমাদের অনেক কষ্ট ও ত্যাগ তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে এ সংবিধান তৈরি করা হয়েছে।

বিএনপির উদ্দেশ্যে ১৪ দলের এ সমন্বয়ক বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য যখন আওয়ামী লীগ আন্দোলন করে তখন বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া উত্তর দেন- এই দেশে পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরেপক্ষ নয়। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। আজকে তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করতে হয়, তারা কোন কোন পাগল আর শিশু ঠিক করেছেন এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার করার জন্য?

বিএনপিকে ইতিহাস স্মরণ করিয়ে আমু বলেন, আমাদের আন্দোলনে বাধ্য হয়ে বিএনপি নিজের মতো করে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন করলো। সেই নির্বাচনে বিএনপি দেখলো জনগণ আর তাদের সঙ্গে নেই। তখন থেকেই তারা সিদ্ধান্ত নিলেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আর নির্বাচন করে লাভ নেই। করা যাবে না। তখন থেকে তারা নির্বাচন বয়কটের প্রক্রিয়া শুরু করলেন। এখন সেই বয়কট নিয়েই তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

দলটির উদ্দেশ্যে সম্পর্কে আমু বলেন, তাদের মূল লক্ষ্য হলো ৩০ লাখ শহীদের রক্তের আদলে লেখা সংবিধান পরিবর্তন করা। এই সংবিধানকে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া। তাই তারা সাংবিধানিক ভিত্তিতে নির্বাচন মানতে রাজি নয়। সাংবিধানিক ধারা বজায় রাখতে তারা রাজি নয়।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস টেনে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এ নেতা বলেন, ঘটনাটির পর মনে করা হয়েছিল শুধু ওই পরিবারকে হত্যা করা হয়েছিল বাকি সব ঠিক আছে। কিন্তু আড়াই মাসের মাথায় কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হলো। তখন মানুষ বুঝতে পারলো এ হত্যাকাণ্ড কোনো দল বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়। এটি প্রতিহিংসামূলক স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানকে ভেঙে যারা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল তাদের প্রতি একাত্তরের পরাজিত শক্তির প্রতিবিপ্লব সংগঠিত হয়।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা আমির হোসেন টেনে আমু বলেন, এই খুনিদের নির্বিচারে বিদেশে যেতে দেওয়া ও পার্লামেন্টে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ পাশ করিয়ে তাদের বিচার করার আওতা থেকে বাইরে রাখা হলো। যারা এই হত্যাকারীদের সহায়তা করলো- তারা যদি এর সাথে সম্পৃক্ততা না থাকবে তবে কেন সহযোগিতা করলো।

পরবর্তী সময় তারা যখন দল গঠন করলেন, তখন যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছেন তাদেরকে দলে নিলেন। সেদিন থেকেই কিন্তু এদেশে রাজনীতি পাল্টে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে তারা কাজ শুরু করেছেন। ওই সময় সংবিধানের চার মূলনীতি ফেলে দেওয়া হলো। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি শুরু করে। বাংলাদেশ বেতারের নামকরণ করা হয় রেডিও বাংলাদেশ। জয় বাংলার নাম বদলে রাখা হলো বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। এভাবে প্রতিটি পদক্ষেপই তারা প্রমাণ করেছে যে তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় যড়যন্ত্রকারীদের ভূমিকা সম্পর্কে আমু বলেন, আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধ করি তখন প্রথমে একটি কথা উঠলো- তোমরা বঙ্গবন্ধুকে চাও নাকি স্বাধীনতা চাও। আমরা এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে বললাম বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা এক ও অভিন্ন। আমরা দুটোই চাই। এই ছিল সে সময়ের অবস্থা।

আজকে রাস্তাঘাটে আমরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাজনীতি দেখতে পাচ্ছি। এটা কিন্তু ব্যক্তি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নয়। শেখ হাসিনার প্রথম অপরাধ, তিনি ১৫ আগস্টে দেশে ছিলেন না। দ্বিতীয় অপরাধ, তিনি দেশে এসে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির একটা পুনরুদ্ধার ঘটালেন। আর তার তৃতীয় অপরাধ, তিনি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দিলেন। এ অপরাধগুলোর কারণে পাকিস্তানের অপশক্তি আজকে তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তাদের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ ধ্বংস করার জন্য ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা হলো। আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হলেন। কিন্তু তার কোনো বিচার হলো না। এমনকি সংসদেও এ বিষয় কোনো আলোচনা করতে দেওয়া হলো না। আজকে তারাই গণতন্ত্রের কথা বলে। জিয়াউর রহমান তার হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে এদেশে প্রথম ভোট ব্যবস্থা বিধ্বস্ত করে। এরশাদ সাহেবের আমলেও একই অবস্থা হয়েছে। নির্বাচন শেষ হওয়ার ১২ দিন পরে ফল ঘোষণা হয়। এই যাদের চরিত্র তারা আজকে গণতন্ত্রের কথা বলে! সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ নির্বাচনের কথা বলে! তারা নিজেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে না। আর বলে আওয়ামী লীগ তো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেছে।

এদের রাজনৈতিক দলের উৎপত্তি কোথা থেকে। প্রথমে ক্ষমতা দখল, তারপর দল গঠন, ভোট ব্যবস্থায় কারচুপি করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা। এই যাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। তারা এদেশের মানুষকে কি রাজনীতি আর কি গণতন্ত্র দেবে? আজকে তারা যে কথাগুলো বলছে এটা তাদের পুরোপুরি রাজনৈতিক সাংঘর্ষিক কথা।

বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, গণ আজাদী লীগ নেতা এসকে সিকদারসহ ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ।