তোশাখানা মামলায় দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ৩ বছরের কারাদণ্ডের রায়ের সঙ্গেই তার ৫ বছর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামাবাদের একটি আদালত। ইমরান খানই কি প্রথম যিনি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কারাদণ্ড এবং রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ হলেন.? না, দেশটিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতারের এমন ঘটনা অনেকবার ঘটেছে। তার মধ্যে নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-
ইমরান খানের আগেও বিভিন্ন মামলায় এখন পর্যন্ত হয় গ্রেফতার হয়েছেন অথবা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন অথবা বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানার মুখোমুখি হয়েছেন দেশটির সাবেক ৮ প্রধানমন্ত্রী। সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, দেশটিতে প্রথমে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে। তিনি ছাড়াও গ্রেফতার হন জুলফিকার আলী ভুট্টো, বেনজির ভুট্টো, সৈয়দ ইউসুফ রাজা গিলানি, নওয়াজ শরিফ, শহীদ খাকান আব্বাসি, শেহবাজ শরীফ ও পারভেজ আশরাফ।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী : পাকিস্তানের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তিনি ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৫৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তৎকালীন জেনারেল আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলে সমর্থন না জানানোর জেরে, ১৯৬২ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। বিনা বিচারে রাখা হয় করাচির কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে।
জুলফিকার আলী ভুট্টো : এরপর ১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বরে গ্রেফতার হন পাকিস্তানের নবম প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো। তাঁর বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। পরে ছাড়া পেলেও সামরিক আইনে আবারও গ্রেফতার হন ভুট্টো। ১৯৭৯ সালের ৪ঠা এপ্রিল তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।
বেনজির ভুট্টো : বাবা জুলফিকার আলী ভুট্টোর পথ ধরে রাজনীতির অঙ্গনে নামেন বেনজির ভুট্টো। দুই দফায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক জীবনে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হন তিনি। ২০০৭ সালের ২৭শে ডিসেম্বর এক নির্বাচনী সভায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় মারা যান বেনজির।
সৈয়দ ইউসুফ রাজা গিলানি : ২০০৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন সৈয়দ ইউসুফ রাজা গিলানি। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে তাকে পাঁচ বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এসময় তাকে কয়েক মিনিটের জন্য শাস্তিপ্রদান করা হয় যার অর্থ দাঁড়ায় তিনি দোষী সাব্যস্ত। তাই, সাজাপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীদের তালিকায় যোগ হয়েছে তার নামও।
রাজা পারভেজ আশরাফ : ২০১৩ সালে একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সম্মুখীন হন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফ। তবে তাকে গ্রেফতার করা হয়নি।
বারের প্রধানমন্ত্রী হয়েও কোনোবারই মেয়াদ পূর্ণ করতে না পারা প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। সবশেষ ২০১৭ সালে ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক জীবনে তিনিও একাধিকবার গ্রেফতার হন। একটি মামলায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তাঁকে সবশেষ গ্রেফতারের পর ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। চিকিৎসার জন্য ২০১৯ সালের নভেম্বরে দেশত্যাগের অনুমতি পান নওয়াজ। এরপর থেকে বিদেশে আছেন তিনি।
শহীদ খাকান আব্বাসি : ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের মে পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন পিএমএল-এন নেতা শহীদ খাকান আব্বাসি। দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। জামিন পাওয়ার পর ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তিনি কারামুক্ত হন।
ইমরান খান : সবশেষ পাকিস্তানে বর্তমানে কারাবাসের সম্মুখীন হয়েছেন পাকিস্তানের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান। তাকে তোশাখানা মামলায় দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ৩ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫ বছরের জন্য রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করে রায় দিয়েছেন আদালত।