নিউইয়র্কে বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যকরি কমিটির সভায় তুলকালাম কা- ঘটেছে। সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। পরে পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়।

জানা গেছে, গত রোববার সোসাইটির নির্বাহী কমিটির সভায় মহিউদ্দীন দেওয়ান ও নওশেদ হোসেনের মধ্যে প্রথমে ঘুষাঘুষি শুরু হয়। এক পর্যায়ে নওশেদকে লক্ষ্য করে চেয়ার ছুঁড়ে পারেন মহিউদ্দীন দেওয়ান। এতে তিনি আহত হন। এসময় নওশেদের সর্মথকরা মহিউদ্দীনের ওপর চড়াও হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে চেয়ার এসে সহ সভাপতি ফারুক চৌধুরীর গায়েও লাগে। ক্রিড়া সম্পাদক মইনুল উদ্দীন মাহবুব ক্ষুব্ধ মহিউদ্দীনকে জড়িয়ে ধরেও থামাতে পারছিলেন না।

তবে মহিউদ্দীনের একজন সর্মথক বলেন, তাকে জড়িয়ে ধরার সুযোগে নওশেদ মহিউদ্দীনকে আঘাত করার সুযোগ পায়। বোতল নিক্ষেপে আহত হন সহ সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। ভয়ে ফারহানা চৌধুরী অন্য রুমে গিয়ে আশ্রয় নেন। কর্মকর্তারা একে অপরের বিরুদ্ধে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একজন অপরজনকে বলেন, ‘সোসাইটির অফিসে বাইরে আয়। খেলা হবে।’ মারামারি শেষে সভাপতি উভয় পক্ষকে মিলিয়ে দেন। এক পর্যায়ে মহিউদ্দীন দেওয়ান সভা ত্যাগ করে চলে যান। কার্যকরি কমিটির সভা শেষে নবগঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের পরিচয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

এরমধ্যে আঘাতপ্রাপ্ত নওশেদের আঙ্গুল ফুলে কালো হয়ে যায়। তিনি ৯১১ কল করেন। ঘটনাটি পুলিশকে অবহিত করেছেন। এম্বুলেন্সের ভেতরে তার আঙ্গুলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।

সোসাইটিতে সংঘাতের ব্যাপারে সভাপতি আব্দুর রব মিয়া বলেন, অপ্রীতিকর একটি ঘটনা ঘটেছে। নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই। তবে আমি ও সাধারণ সম্পাদক আপ্রাণ চেষ্টা করেছি পরিবেশ শান্ত রাখতে। শেষে মহিউদ্দীন দেওয়ান ও নওশেদকে মিলিয়ে দিয়েছি। বৈঠক শেষ হবার পর আমি, রুহুল আমিন সিদ্দিকী ও ফারুক চৌধুরী চলে আসি। পরে জানতে পেরেছি নওশেদ তার আহত হবার বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেছে।

এদিকে একটি দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, ট্রাস্টি বোর্ডের ১২ জনের মধ্যে ১১ জন ইতোমধ্যেই নির্বাচিত হয়েছেন। একটি পোস্টের নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই এই সংঘাতের সূত্রপাত। কমিউিনিটির এক বড় ভাইকে ট্রাস্টিবোর্ডে রাখা ও ভোট নিয়েই নাকি এই সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছিল। নিউইয়র্কে বাংলাদেশ সোসাইটির ইতিহাসে সৃষ্টি হলো কলংকজনক অধ্যায়ের।

এদিকে সোসাইটির এক পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে , যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশিদের আমব্রেলা সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির নবনির্বাচিত ট্রাস্টি বোর্ডের সাথে কার্যকরী পরিষদের পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত। রোববার বিকেলে সোসাইটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সংগঠনের সভাপতি মো. আব্দুর রব মিয়ার নেতৃত্বে কার্যকরী পরিষদের সদস্যরা নবনির্বাচিত বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় কার্যকরী পরিষদ সদস্যরা তাদের দেয়া বক্তব্যে সোসাইটিকে আরো গতিশীল এবং কল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত করতে তাদের পরামর্শ এবং সহযোগিতা কামনা করেন।

নবনির্বাচিত ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মো. আকতার হোসেন, মফিজুর রহমান, আজিমুর রহমান বোরহান, মো. এমদাদুল হক কামাল, আব্দুল হাসিম হাসনু, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, মো. শাহজাহান সিরাজী, খোকন মোশারফ, মো. জহিরুল ইসলাম মোল্লা, মো. আতরাউল আলম। বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যরা তাদের নির্বাচিত করে বাংলাদেশ সোসাইটির কল্যাণে তাদের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য কার্যকরী পরিষদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তারা বলেন সোসাইটিকে আরো গণমুখী এবং কল্যাণকর সংগঠনের পরিণত করতে যেকোনো ধরনের সহযোগিতার জন্য তারা সবসময় প্রস্তুত আছেন।

এদিকে সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের নিয়মিত মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয় দুপুর ১২:৩০। সভাপতি মো. আব্দুর রব মিয়ার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. রুহুল আমিন সিদ্দিকীর পরিচালনায় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মহিউদ্দিন দেওয়ান, সহ-সভাপতি- ফারুক চৌধুরী, সহ-সাধারণ সম্পাদক- আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ মো. নওশেদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক- আবুল কালাম ভূঁইয়া, জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক- রিজু মোহাম্মদ, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মো. টিপু খান, সাহিত্য সম্পাদক- ফয়সল আহমদ, ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক- মাইনুল উদ্দিন মাহবুব, স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক- প্রদীপ ভট্টাচার্য, কার্যকরী সদস্য- ফারহানা চৌধুরী, মো. আখতার বাবুল, আবুল বাশার ভূঁইয়া, মো. সাদী মিন্টু ও শাহ মিজানুর রহমান।