গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে ড. রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক পদ থেকে অপসারণের পরদিন গতকাল দুই নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। নুরুল হক নুর মন্ত্রী হতে চান জানিয়ে রেজা কিবরিয়া বলেন, গঠনতন্ত্র মোতাবেক তাকে অপসারণ করা হয়নি। তাই তিনি নুরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। নুর তাকে বলেছেন, নির্বাচনে অংশ নিলে সরকার একজনকে দুই কোটি টাকা দেবে। অভিযোগ অস্বীকার করে নুরের দাবি, নিয়মতান্ত্রিকভাবে অপসারণ করা হয়েছে। এদিকে গণঅধিকার পরিষদে সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

গতকাল দুপুরে রেজা কিবরিয়া তার গুলশানের বাসার ছাদের এবং নুর বিজয়নগরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন। ১০ জুলাই গণঅধিকার পরিষদের কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে।

মামলা করবেন রেজা কিবরিয়া : রেজা কিবরিয়া বলেন, আমাদের যে সংবিধান আছে, সেখানে আহ্বায়ক বা সভাপতিকে সরাতে কেন্দ্রীয় কমিটির ৮১ জনের ভোট প্রয়োজন। কিন্তু ভোটে ৪৮ জনের মধ্যে ৩৬ জন স্বাক্ষর আছে। এ ছাড়া ভোটের আগেও তারা মিথ্যা স্বাক্ষর নিয়েছে। যারা স্বাক্ষর করেননি তাদের স্বাক্ষরও আছে। সেজন্য ভুয়া স্বাক্ষর ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ভোটগ্রহণের কারণে নুরুল হক, রাশেদ খান ও শাকিল উজ জামানের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। রবিবার রাতেই পূর্বনির্ধারিত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, তিন সপ্তাহ পরে দেশে ফিরে বড় সভা করবেন। তিনি ইজরায়েলি গোয়েন্দার সঙ্গে কাজ করতে চান না।

তিনি বলেন, দলের নেতৃত্ব তার কাছেই আছে। একটা লোকের জন্য আজকে দলের এই অবস্থা। জাহাঙ্গীর কবির নানক, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে দেখা করেছেন নুর। তিনি মন্ত্রী হতে চান, কিছু টাকা-পয়সা বানাতে চান। পাশে বসা যুগ্ম আহ্বায়ক আমিন আহমেদ আফসারীকে দেখিয়ে তিনি বলেন, তাকে নুর বলেছেন, সরকারের এই নির্বাচনে গেলে কেমন হয়? সরকার

একজনকে দুই কোটি টাকা দেবে নির্বাচনের জন্য। আসফারী নির্বাচনে গেলে তাকে এক কোটি টাকা দেবে। আপনারা এটা আফসারীকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। সরকার তাকে এই অফারটা দিয়েছে। এ সময়ে আফসারীও হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়েন।

নুর বলছেন, আপনি বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্র করছেন এ প্রসঙ্গে কিবরিয়া বলেন, বিএনপি এত ঠুনকো দল না যে তার কথায় ভেঙে যাবে। এ সময় যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মালেক ফরাজী, সহকারী সদস্য সচিব শেখ খায়রুল কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগ ভিত্তিহীন বললেন নুর : গুলশানের বাসায় দুপুরে রেজা কিবরিয়ার সংবাদ সম্মেলনের পর বিকালে পুরানা পল্টনে জামান টাওয়ারে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, ইজরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার কোনো সদস্যের সঙ্গে তার বৈঠক হয়নি। তিনি কোনো অর্থ পাননি। এসব রেজা কিবরিয়ার মনগড়া কথা।

সংবাদ সম্মেলনটি কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার জন্য ডাকা হলেও পুরোটা সময় সাংবাদিকরা সংগঠনের নেতৃত্বে পাল্টাপাল্টি অবস্থানের বিষয়ে নানা প্রশ্ন করেন।

নুর দাবি করেন, রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে ৮৪ জন সদস্যের অনাস্থা প্রস্তাব আগেই পাঠানো হয়েছিল। যেখানে দরকার ছিল ৪১ জনের মতামত। আর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি অভিযুক্ত হলেও সাত দিনের মধ্যে তার জবাব দেওয়ার সুযোগ ছিল। তিনি যদি শনিবার বৈঠকে আসতেন তাহলে পরিস্থিতিটা ভিন্ন হতে পারত। কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। শুধু কমিটির পাঁচজন সদস্য এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে এবং দুজন সদস্য ভোটদানে বিরত থেকেছেন। কিবরিয়ার অভিযোগের জবাবে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে নুরের কোনো বৈঠক হয়নি।