রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন। এরপর আজ শুক্রবার পর্যন্ত্র টানা ৪৮৫ দিনের মতো চলছে দেশ দুইটির সংঘাত। এতে দুই পক্ষের বহু হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে, তবে যুদ্ধ বন্ধে এখন পর্যন্ত কোনো লক্ষণ নেই।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে পুতিন কি ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে। এই সম্ভাবনা এখন আর নাকচ করছেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

এ নিয়ে মার্কিন গত সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আমার ভয় পুতিন হয়তো কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবেন। বিশ্বাস করেন এই বিপদ এখন শুধু বাস্তব।

গত সপ্তাহে প্রোফাইল ম্যাগাজিনে সুপরিচিত একজন রুশ পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ সের্গেই কারাগোনভের একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। কারাগোনভ রুশ সরকারের উঁচু মহলের ঘনিষ্ঠ।

তিনি ম্যাগাজিনে যে লেখা তুলে ধরেছেন তা অনেকটা এরকম– পশ্চিমা দেশগুলোর সংকল্প ধূলিসাৎ করতে রাশিয়াকে এখন শক্তভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে যে প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে তারা প্রস্তুত এবং সে কারণে পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগের বর্তমান শর্তাবলী শিথিল করতে হবে।

তিনি আরও লিখেছেন, শত্রুদের অবশ্যই বুঝিয়ে দিতে হবে যে তাদের অতীত এবং বর্তমানের সমস্ত আগ্রাসী তৎপরতার বদলা হিসেবে আমরা আগে-ভাগেই আঘাত করতে প্রস্তুত। এতে বিশ্বব্যাপী এবং পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি এড়ানো যাবে।

এ ছাড়া কারাগোনভ লিখেন, কিন্তু তারপরও যদি তারা না থামে তখন কি হবে? তখন আমাদের কতগুলো দেশে বেশ কতগুলো টার্গেটে আঘাত করতে হবে যাতে যেসব লোকের বোধ-বুদ্ধি এবং যুক্তি লোপ পেয়েছে তাদের যেন হুঁশ ফেরে।

এক বছরের বেশি সময় ধরে চলছে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ

প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজে বেশ কয়েক দিন আগে নিশ্চিত করেন, রাশিয়া বেলারুশে ট্যাকটিকাল পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রথম চালান সেদেশে পৌঁছে গেছে। পুতিন বলেন, যারা আমাদের কৌশলগত পরাজয়ের জন্য উন্মুখ, তাদের হুঁশ ফেরাতে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

রাশিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কিত দৈনিক কোমেরসান্ট সংকট সমাধানে পারমাণবিক যুদ্ধের ধারণা খুবই অমঙ্গল শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।

তবে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া কখন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে বা আদৌ করা উচিৎ কিনা তা নিয়ে এদেশে এখন খোলাখুলি বিতর্ক শুরু হয়েছে, এবং কট্টরপন্থীদের সাথে সবাই একসাথে গলা মেলাচ্ছে না।

যেমন, বেশ কজন রুশ পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ যৌথভাবে কোমেরসান্টের ঐ নিবন্ধটি লিখেছেন। সেখানে তারা যুক্তি দিয়েছেন কেন সের্গেই কারাগোনভের চিন্তা-ভাবনা ভুল এবং বিপজ্জনক।

অ্যালেক্সেই আরবাতভ, কনস্তানতিন বোগদানভ এবং মিদিত্রি স্তেফানোভিচ লিখেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র যুদ্ধ প্রশমিত করবে এবং কৌশলগত সমস্যার সমাধান করবে – এমন ধারণা ব্যর্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ ধরনের কৌশল খুবই সন্দেহজনক এবং, খুব সম্ভবত ভুল। এরা সবাই রুশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের অন্তর্গত গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির সাথে যুক্ত।

কিন্তু পশ্চিমের ওপর আগে-ভাগেই পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগের কথা বলা মানে বিষয়টির গুরুত্বকে অন্য স্তরে নিয়ে যাওয়া।