চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বেইজিংয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তাইওয়ান নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের স্বাধীনতায় সমর্থন করে না।

বেইজিং সফরের দ্বিতীয় দিনে হওয়া এই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, চীনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের স্বাধীনতায় সমর্থন করে না।
তিনি বলেন, যদি তাইওয়ান নিয়ে যদি কোনো সংকট হতো, তা অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারত এবং যা পুরো বিশ্বকে আক্রান্ত করত।

তিনি ব্যাখ্যা দেন যে, প্রতিদিন প্রায় ৫০ শতাংশ বাণিজ্যিক জাহাজ তাইওয়ান প্রণালী দিয়ে যাতায়াত করে। রপ্তানির ৭০ শতাংশ সেমি কনডাক্টর তাইওয়ানের তৈরি।

অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে রাশিয়াকে কোনো ‘প্রাণঘাতী সহায়তা’ দেবে না চীন। এ কথা বলে যোগ করেন যে, চীনের এ অঙ্গীকারের কথা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বার বার জানানো হয়েছে, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, অন্যান্য দেশকেও।

তিনি জানান, চীনের কিছু প্রাইভেট কোম্পানির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন, যারা হয়তো কিছু সহায়তা দিচ্ছে, যার উদ্দেশ্য স্পষ্টতই ইউক্রেনে রুশ সামরিক সক্ষমতা বাড়ানো।

প্রেসিডেন্ট শি এবং চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই- উভয়ের সঙ্গে ব্লিঙ্কেনের কথোপকথন ছিল ‘জোরালো’ – এবং তাতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসী যুদ্ধ থেকে শুরু করে আমেরিকার ফেন্টানিল সংকট পর্যন্ত সবই অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ব্লিঙ্কেন বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্ববহ এবং একে স্থিতিশীল রাখা দু- দেশেরই দায়িত্ব।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনকে অর্থনৈতিকভাবে বোতলবন্দি করতে চাইছে না। তার কথায় এ রকম কিছু করাটা মার্কিন স্বার্থের অনুকূল নয়, এবং চীনের অর্থনৈতিক সাফল্য যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক।

ব্লিঙ্কেন বলেন, কিন্তু আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্যে ‘বিশেষ কিছু প্রযুক্তি’ অবশ্যই আগলে রাখতে হবে।

তিনি বলেন উত্তর কোরিয়াতে যা ঘটছে, তা নিয়েও প্রেসিডেন্ট শিয়ের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শিনজিয়াং, তিব্বত ও হংকং-এ চীনের মানবাধিকার লংঘন নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ককে স্থিতিশীল রাখা প্রয়োজন, এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতা সংঘাতে পরিণত হোক এটা কাম্য নয়।

শিয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয় – চীনা পক্ষ তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে, এবং সুনির্দিষ্ট কিছু ইস্যুতে কিছু অগ্রগতি এবং মতৈক্য অর্জিত হয়েছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া একটি বিবৃতিতেও একই কথা বলা হয়।

শি বলেন, চীনা পক্ষের সঙ্গে মি. ব্লিঙ্কেনের খোলামেলা এবং বিস্তুারিত আলোচনা হয়েছে এবং তিনি আশা করেন যে এ সফরের মধ্যে দিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে’ অবদান রাখতে পারবেন।

ব্লিঙ্কেনের এই সফরের সময়ই আরও জানানো হয়েছে যে, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং আগামীতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন এবং দু দেশের মধ্যে বিমান চলাচল ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ আরও বাড়ানো হবে।