প্রবাসী বাংলাদেশিদের সূরের তালে মাতিয়ে গেলেন নগর বাউল খ্যাত বাংলাদেশের জনপ্রিয় গায়ক জেমস।৪ জুন রবিবার নিউইয়র্কের জামাইকার অ্যামাজুরা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রবাসে আয়োজিত অন্যতম সেরা এ সঙ্গীতানুষ্ঠান। শো-টাইম মিউজিকের আয়োজনে জনপ্রিয় গায়ক জেমসের একক সঙ্গীতানুষ্ঠানের ছিল উপচে পড়া দর্শক। জেমসের গান শোনার জন্য নিউইয়র্ক ছাড়াও পার্শ্ববর্তী কানেকটিকাট, নিউ জার্সি ও পেনসিলভেনিয়া থেকে প্রবাসীরা ছুটে আসেন। হলের দেড় হাজার আসন কানায় কানায় পূর্ণ। দাঁড়িয়ে আছেন আরো শ চারেক দর্শক। নগরবাউল জেমসের গান শুনতে এসেছেন সবাই। আর প্রায় পাঁচ বছর পর নিউইয়র্ক মাতালেন জেমস। রাত পৌনে ৯টা নাগাদ মঞ্চে উঠলেন জেমস। মুখে মাঝারি দাড়ি-গোঁফ, লম্বা চুলের ওপর মাথায় বাঁধা ধূসর রঙের কাপড়, পরনে কালো টি-শার্ট আর জিনস। পায়ে বাদামি রঙের চামড়ার জুতা। কাঁধে চিরচেনা গিটার ঝুলছে। এ যেন চিরচেনা সেই তারুণ্যের প্রতীক নগরবাউল জেমস।
‘নগরবাউল জেমস লাইভ ইন কনসার্ট’-এর মঞ্চে উঠতেই দর্শক গ্যালারি মুখর হয়ে উঠল ‘লাভ ইউ গুরু’ আর ‘জয় গুরু’ ধ্বনিতে। সাড়ে ১০টা অবধি টানা গান গেয়েছেন জেমস।

হলের ভেতরে তখন জেমসকে ঘিরে রীতিমত মেতে উঠেছে নিউইয়র্কের বাঙালি সমাজ। বাইরে আয়োজক প্রতিষ্ঠান শো টাইম মিউজিকের কর্ণধার আলমগীর খান আলম যখন ঘোষণা করেছেন ‘সোল্ড আউট’ তখনও টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ানো শ খানেক মানুষ।
আলমগীর খান আলম বলেন, আমেরিকার বিভিন্ন স্টেট থেকে এই কনসার্টে দর্শক এসেছেন। তাদের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় এমন আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে।
নানা রঙ্গের আলো আঁধারীতে স্টেজে আসেন জেমস। আর উল্লাসে মাতোয়ারা তারুণ্য। একে একে গাইলেন তাঁর গাওয়া জনপ্রিয় ১৩টি গান। প্রতিটি গানই তিনি গাইলেন তারুণ্যকে সঙ্গে নিয়ে। কখনও নিজে গাইলেন, কখনও মাঝখানে ছেড়ে দিলেন, আর তা গেয়ে শেষ করলেন দর্শক-শ্রোতা।
মাঝে মাঝে জেমসের দ্বরাজ কণ্ঠের আওয়াজ তোমরাই আমার জান, তোমরাই আমার গান। আর সঙ্গে সঙ্গে দর্শক-শ্রোতার ভালবাসার, ভাললাগার চিৎকার।
কবিতা তুমি স্বপ্নচারিণী’ দিয়ে পরিবেশনা শুরু করেন জেমস।এরপর দিওয়ানা মাস্তানা, গুরু ঘর বালাইলা কি দিয়া, আসবার কালে আইছি একা, পদ্ম পাতার জল,বাংলার লাঠিয়াল, মীরাবাঈ,তারায় তারায়, পাগলা হাওয়ায় দোলে গেয়ে মাতিয়ে রাখেন গোটা অডিটরিয়াম। আর যখন তিনি ‘মা’গাইলেন, সবাই তখন অশ্রুসজল।
সবশেষে জেমস হিন্দি ছবিতে গাওয়া তাঁর জনপ্রিয় গান ভিগি ভিগি গানটি গেয়ে শোনান। আর সেই সঙ্গে শেষ হয় ৪ বছর বিরতির নিউইয়র্ক শো। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে নিউইয়র্কে সবশেষ শো করেছিলেন নগর বাউলের জেমস।
কনসার্টে স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন এলেগ্রা হোম কেয়ারের সিইও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ,ইমিগ্র্যান্ট এলডার হোমকেয়ারের সিইও গিয়াস আহমেদ, গোল্ডেন এইজ হোম কেয়ারের সিইও শাহ নেওয়াজ, বারী হোম কেয়ারের সিইও আসেফ বারী টুটুল,ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার এট লার্জ এটর্নী মঈন চৌধুরী,নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের উপদেষ্টা ফাহাদ সোলায়মান, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী নূরুল আজিমসহ বিশিষ্টজনেরা।
সোমবার রাতে এক ফেসবুক পোস্টে সংগীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নি লিখেছেন,‘আমার দেশের কোনো শিল্পীর আগমনে যখন বিদেশের মাটিতে ট্র্যাফিক জ্যাম তৈরি হয়। পুলিশ সিকিউরিটিকে হিমশিম খেতে হয়, ভিড় সামলাতে তাদের নাজেহাল হতে হয়, তখন তা ছিল আমার কাছে অবিশ্বাস্য। গত নিউইয়র্কে হয়ে গেল নগরবাউল ‘জেমস’-এর শো। জ্যামাইকার অ্যামাজুরা হলের পুরো এলাকা যেন কাল হয়ে উঠেছিল একটা জেমসময় বাংলাদেশ।