বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বিনিয়োগ সম্প্রসারণের আগ্রহ দেখিয়েছে জাপান। অন্যদিকে জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ হতে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ হতে জাপানকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার ৫ম বাংলাদেশ-জাপান সরকারি-বেসরকারি যৌথ অর্থনৈতিক সংলাপে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। পালাক্রম অনুযায়ী এবারের অর্থনৈতিক সংলাপের আয়োজক দেশ জাপান, কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অনলাইন প্ল্যাটফরমে এ যৌথ অর্থনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। মূলত ২০১৪ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন দিগন্তের সূচনা হয়, যার ধারাবাহিকতায় দুই দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে বাংলাদেশ-জাপান সরকারি-বেসরকারি যৌথ অর্থনৈতিক সংলাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বৈঠকে জাপানের পক্ষ হতে বাংলাদেশে জাপানের বিদ্যমান বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন সেক্টরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনিয়োগের এবং সহযোগিতার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি পক্ষ হতে বক্তব্য প্রদান করা হয়। একই সাথে বিনিয়োগ সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন করণীয় সম্পর্কে অবহিত করা হয়।

এদেশে জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ হতে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ হতে জাপানকে আশ্বস্ত করা হয় এবং ইতোপূর্বে জাপানি বিনিয়োগকারীরা যেসব বিষয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলো তার বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়। জাপানের পক্ষ হতে বাংলাদেশের গৃহীত কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করা হয় এবং ভবিষ্যতেও এ অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে মর্মে আশা প্রকাশ করা হয়।

ঢাকা প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এ অর্থনৈতিক সংলাপে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন। গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক, চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ: জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব/সচিবসহ বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান; জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক সংলাপে অংশগ্রহণ করেন। বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিাই, বিজিএমইএ, জেবিসিসিআইসহ বিভিন্ন বেসরকারি বাণিজ্য সংগঠনের সভাপতি প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

টোকিও প্রান্তে জাপান থেকে অংশগ্রহণকারী দলের নেতৃত্বে ছিলেন Mr. HIRAI Hirohide, Vice Minister for International Affairs, Ministry of Economy Trade and Industry (METI). এছাড়া বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত, Japan Chamber of Commerce and Industry (JCCI) as Japan-Bangladesh Committee for Commercial and Economic Co-operation এর চেয়ারম্যান; জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা এবং JICA JETRO বাংলাদেশ অফিসের প্রধানসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা সংলাপে অংশগ্রহণ করেন।

এবারের সংলাপে সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং মহাপরিচালক (নির্বাহী সেল ও বেসরকারি ইপিজেড), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্তৃক Agribusiness & Logistics Sector এ বিভিন্ন নীতি সহায়তা এবং প্রণোদনা সম্পর্কিত সরকারি উদ্যোগসমূহ উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশে Agribusiness & Logistics Sector জাপানী বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা নিয়ে যথাক্রমে ড. এফ এইচ আনসারি, প্রেসিডেন্ট এসিআই এগ্রিবিজনেস ডিভিশন ও ড. এম মাসরুর রিয়াজ, প্রেসিডেন্ট ও সিইও, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ কর্তৃক দুটি উপস্থাপনা প্রদান করা হয়। এছাড়া উভয়পক্ষ বাংলাদেশে জাপানিজ বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন এবং নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় জিটুজি ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ স্পেশাল ইকনোমিক জোন এর কার্যক্রম নিয়ে সন্তোষ। প্রকাশ করেন।

এ সময় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য জাপানি বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন জাপান সফরের মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন মাত্রা লাভ করবে আশা প্রকাশ করে উভয়পক্ষ ৫ম বাংলাদেশ-জাপান সরকারি-বেসরকারি যৌথ অর্থনৈতিক সংলাপ সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

রাকিব/এখন সময়