গত ৯ ডিসেম্বর আটক হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর প্রচণ্ড নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, জাতীয়তাবাদী তাঁতি দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদও জেলে ছিলেন। উনি এক বিল্ডিংয়ে, আর আমার ছিলাম অন্য বিল্ডিংয়ে। এরপর আমাদের ডিভিশনে দিয়েছে, আর উনাকে হাসপাতালে দিয়েছে। এবার কারাগারের ভেতরে প্রচণ্ড নির্যাতন করা হয়েছে। সেই নির্যাতনের কথা বলে কষ্ট বাড়াতে চাই না। নির্যাতন হবে, সেটা জানি। কারণ, আমরা সত্যের পথে আছি, গণতন্ত্রের পথে আছি। সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন।

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্যাতন করেই বর্তমান সরকার টিকে আছে। এজন্যই আন্দোলনের মাধ্যমে তাদেরকে সরাতে হবে। এটাই হচ্ছে আমাদের প্রধান কাজ। এজন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি। আমাদের কৃষক-শ্রমিক-তাঁতি-কামার তথা সারা দেশের মানুষ অনেক কষ্টে আছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। প্রতিদিন টিসিবির লাইনে মানুষের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের প্রোটিনের জন্য প্রতিদিন তাদের অন্তত একটি করে ডিম খেতে দিতে হয়। সেই ডিম এখন ছোঁয়া যায় না। ব্রয়লার মুরগির দামও প্রতি কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, কীসের দাম বাড়েনি? চিনির দাম বেড়েছে, লবণের দামও বেড়েছে। শহরে বাসাভাড়া বেড়েছে। লোকজন বাধ্য হয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। সবকিছুর ব্যয় বেড়েছে বহু গুণ। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন বক্তৃতায় বলছেন, এত উন্নয়ন করছি, তারপরেও এত চিৎকার করে কেন? আমরা বলি, উন্নয়ন করছেন সত্যি। সেটা দেশের মানুষের নয়, আপনাদের দলের লোকজনের। আপনাদের যারা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও দলের পৃষ্ঠপোষক আছে, তাদের উন্নয়ন করছেন। ইতোমধ্যে তারা আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছে।

বাম দলগুলোর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এমন একটা পার্লামেন্ট বানানো হয়েছে, যে পার্লামেন্টে কখনো নির্বাচন হয় না। আমাদের কয়েকজন সেই পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করে চলে এসেছেন। ২০১৪ সালেও তারা (আওয়ামী লীগ) একইভাবে নির্বাচন করেছিল। ২০১৪ সালে ১৫৪ জনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের বেশকিছু লোকজন, বিশেষ করে জাতীয় পার্টি ডুগডুগি বাজিয়ে সেখানে যোগদান করল। আমাদের অনেক বাম নেতা, যারা এক সময়কার প্রখ্যাত নেতা, যারা বড় বড় কথা বলেন এখনও; তারাও সেদিন নৌকার সঙ্গে মহাজোট করে সেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। এখন তাদের আবার একটু অসুবিধা হচ্ছে। মন্ত্রিত্ব দেয়নি। যে কারণে ভাগ-বাটোয়ারা ঠিকমতো হচ্ছে না। এখন বলছে, ১৪ দল কাজ করে না। তাদের সঙ্গে কথা রাখা হয়নি। এরা আওয়ামী লীগের চেয়েও খারাপ। আজকে এই দেশে কয়েকটি দল তৈরি হয়েছে, যাদের কাজ হচ্ছে তাবেদারি করা ও জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা।

নির্বাচন প্রসঙ্গে সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা জনগণের দিকে তাকান, জনগণের কথা শুনুন। জনগণের দাবি একটাই, তারা নিজেদের ভোট দিয়ে পছন্দমতো জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে না। জনগণের পার্লামেন্ট নেই। তাই, কেউ জনগণের কথা বলতে পারে না। তাই, আমাদের সবচেয়ে বড় দাবি, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার না কি করা যাবে না। কারণ, সংবিধানে নেই। আপনারা যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য দাবি তুলে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলেন, তখন কি সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল? ছিল না। বেগম খালেদা জিয়া দেখেছেন, জনগণ এটা চায়, এটা করলে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান হবে; তখন তিনি পার্লামেন্টে বিশেষ অধিবেশন বসিয়ে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাস করে সংবিধানে সংযোজন করেছেন।

তাঁতি দলের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তাঁতিদের বাঁচিয়ে রাখা ও তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জিয়াউর রহমান তাঁতি দল তৈরি করেছিলেন। এখন যারা তাঁতি দল করছেন, তাদের কাছে আমার আবেদন থাকবে, আপনারা আপনাদের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করুন। কিভাবে তাঁতিদের বাঁচিয়ে রাখবেন, কিভাবে তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখবেন, সেই বিষয় নিয়ে কাজ করুন। শুধু মূল দলের সঙ্গে রাস্তায় নেমে স্লোগান দিলে কাজ হবে না। আপনাদেরকে তাঁতিদের জন্য কাজ করতে হবে।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন—বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, তাঁতি দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ ও সদস্য সচিব হাজী মুজিবুর রহমানসহ অনেকে।

রাকিব/এখন সময়